গ্রাফিক্স ডিজাইনের রূপকে অ্যানিমেশনের মাধ্যমে প্রকাশ করার প্রক্রিয়াই হলো মোশন গ্রাফিক্স। অনেকেই হয়তো ভেবে থাকেন যে অ্যানিমেশন এবং গ্রাফিক্স দিয়ে তৈরী মোশন একই জিনিস কিন্তু বাস্তবিক ভাবে দুটি আলাদা জিনিস মোশন ডিজাইন হচ্ছে অ্যানিমেশনের একটি স্টাইল বা রূপ যেটিকে সম্পূর্ণ অ্যানিমেশন বলা যায় না। আজ আমরা এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
মোশন গ্রাফিক্স কি ?
গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোনো (শেইপ, ডিজাইন, অবজেক্ট , আর্টওয়ার্ক) এসব জিনিসকে নাড়াচাড়া করা বা জীবন্ত করে তোলাকেই মূলত মোশন গ্রাফিক্স বলা হয়। এই ধরণের গ্রাফিক্যাল জিনিস আমরা বিভিন্ন সিনেমা , সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিও, বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ব্যবহার হতে দেখি। এই ডিজাইন দিয়ে তৈরী কন্টেন্টগুলো দর্শকদের আনন্দ দেয়ার জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাধ্যম যেটি দর্শকদের অনেকটা ২ডি অ্যানিমেশনের মতো একটি ফিলিংস দে যদিও ২ডি অ্যানিমেশন এবং গ্রাফিক্স দিয়ে মোশন তৈরী আলাদা দুটি জিনিস। ২ডি অ্যানিমেশন কার্টুন যেমন মানুষের মতো চলাফেরা করতে তাছাড়া ভয়েস ওভারের মাধ্যমে কথা বলানো যায় যেমন আমরা টম এন্ড জেরি যেটিকে সর্বকালের অন্যতম সেরা কার্টুন বলা হয় সেটি ছিল ২ডি অ্যানিমেশনের তৈরী কার্টুন এটি কোনো মোশন নয় মোশন এ আপনি শুধুমাত্র কিছু গ্রাফিক্স ডিজাইনকে হালকা নাড়াচাড়া করতে দেখবেন। বিভিন্ন মুভিতে বা ইউটিউব ভিডিওতে ইন্ট্রো গল্পে,স্টোরিটেলিং এর সময় বা ভিডিওর মাঝে আমরা কিছু গ্রাফিক্যাল ইমেজ এর মুভমেন্ট দেখতে পাই যেটি হলো মোশন ভিডিও।
মোশন ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাস :
২০ শতকের গোড়ার দিকে অস্কার ফিশিংগার এবং লেন লাইয়ের হাত ধরে গ্রাফিক্স দ্বারা মোশন তৈরির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫০-৬০ এর দশক থেকে ফিল্ম এবং টেলিভিশনে মাধ্যমে এই ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। শৌল বাস যিনি একজন অস্কারজয়ী কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার ছিলেন তিনি "সাইকো" এবং "ভার্টিগো" এর মতো চলচ্চিত্রের জন্য গ্রাফিক্স দিয়ে মোশন ভিডিওর মাধ্যমে আইকনিক শিরোনাম সিকোয়েন্স তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
কিভাবে মোশন ডিজাইন তৈরী করতে হয় ?
মোশন তৈরী করাটা কিন্তু খুবই আনন্দের একটি কাজ। যারা মোশন ডিজাইন করে তারা কিন্তু সেটি করে খুবই আনন্দ পায়। মোশন তৈরী করার কিছু পদক্ষেপ আমরা এখন জানবো।
> সফটওয়্যার চয়েস করুন : মোশন তৈরী করার জন্য কম্পিউটারের কিছু সফটওয়্যার রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি মোশনের কাজ করতে পারেন যেমন : Adobe After Effects,Adobe Illustrator, এবং DaVinci Resolve ছাড়াও আরো কিছু সফটওয়্যার রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি মোশন তৈরী করতে পারেন। তাই যে সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাফিক্সকে মোশনে রূপান্তর করতে চান সেই সফটওয়্যারের কাজ প্রথমে আপনাকে শিখতে হবে এবং শিখার পরে আপনি যেকোনো গ্রাফিক্সকে মোশনে রূপান্তর করতে পারবেন।
> স্ক্রিপ্ট তৈরী করুন : আপনি যে সম্পর্কিত গ্রাফিক্সটি তৈরী করে সেটিকে মোশনে রূপান্তর করতে চান সে সম্পর্কিত একটি স্টোরি লিখে ফেলতে পারেন যেটি কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার লিখা অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন।
> গ্রাফিক্স তৈরী করুন : আপনি যে কাজটির গ্রাফিক্স থেকে মোশন তৈরী করতে চান প্রথমে সেটির জন্য একটি গ্রাফিক্স ডিজাইন তৈরী করতে হবে। আপনি ইলাস্ট্রেটর দিয়ে একটি ভেক্টর গ্রাফিক্স তৈরী করতে পারেন পরে সেটি আফটার ইফেক্টস এ নিয়ে গিয়ে সেটিকে অ্যানিমেট করে আপনি তৈরী করে ফেলতে পারেন আপনার পছন্দের মোশন ডিজাইনটি।
> পূর্ণাঙ্গ ফাইল তৈরী : আপনার কাজটি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আপনি সেটিকে একটি সম্পূর্ণ ভিডিওর মাধ্যমে বা GIF এর মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন।
> শেয়ার করা : আপনি যখন পূর্ণাঙ্গ একটি ফাইল তৈরী করে ফেলবেন আপনার তৈরিকৃত মোশনটি এড করে তারপর সেটি ইউটিউব, ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিয়ে মানুষকে আনন্দ দিতে পারেন। মানুষ যখন সেটি দেখে পছন্দ করবে তখন আপনি নিজের কাজের একটি স্বীকৃতি পাবেন যা আপনাকে আরো ভালোভাবে কাজটি করতে সাহায্য করবে।
প্রথমেই আপনার সফটওয়্যার নির্বাচন, কোন বিষয়টির উপরে ভিডিও বানাবেন সেটি নির্ধারণ করুন ,স্ক্রিপ্ট লিখুন, গ্রাফিক্স তৈরী করুন সেটিকে মোশনে রূপান্তর করুন, ভয়েস এড করুন তারপর সম্পুর্নও ভিডিওটি তৈরী হয়ে গেলে সেটি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্মগুলোতে আপলোড করার মাধ্যমে নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মোশন ডিজাইনার হিসেবে গড়ে তুলুন।
মোশন গ্রাফিক্স কিভাবে শিখবেন ?
আমরা যখন ইউটিউবে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনো ভিডিও দেখতে পাই ওই ভিডিওর মধ্যে যদি কোনো গ্রাফিক্সের তৈরী মোশন কনটেন্ট থাকে তবে ভিডিওটি আমাদের কাছে আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠে তখন আমরা ওই ধরণের ভিডিওটি অনেক বেশি উপভোগ করতে পারি। তাই অনেকে বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইন বানিয়ে সেটিকে মোশনে রূপান্তর করা শিখতে চায় এখন আমরা জানবো কিভাবে এটি শিখতে হয়।
অনলাইনে আপনি বিভিন্ন ভাবে শিখতে পারেন যেমন আপনি ইউটিউব দেখে সম্পূর্ণ ফ্রীতেই শিখতে পারেন অথবা পেইড বিভিন্ন কোর্স রয়েছে যেসব কোর্স আপনি কিনে নিতে পারেন এবং যার মাধ্যমে আপনি এটি শিখতে পারেন। আপনি যখন পুরোপুরিভাবে এটি শিখতে পারবেন তখন যেকোনো একটি গ্রাফিক্স ডিজাইন তৈরী করুন এবং সে ডিজাইনটিকে মোশনে রূপান্তর করে ফেলুন। এবং সেটি আপনার ভিডিওতে ব্যবহার করে তৈরী করে ফেলুন আকর্ষণীয় একটি ভিডিও। তাই আপনি শিখতে চাইলে অনলাইনে বা অফলাইনে বিভিন্ন কোর্স বা বিভিন্ন আইটি ইনস্টিটিউট থেকে ট্রেনিং নিয়ে কাজটি শুরু করে দিতে পারেন।এবং ধৈর্য দিয়ে লেগে থেকে আপনি যদি কাজটি করতে পারেন তবে সফল হতে বেশিদিন সময় লাগবে না।
মোশন গ্রাফিক্স থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করতে পারি?
আপনি যদি গ্রাফিক্স থেকে মোশন তৈরী করে ইনকাম করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই এ কাজটি ভালোভাবে শিখতে হবে তারপর আপনি কাজটি শিখে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন : ফাইবার, আপওয়ার্ক , ফ্রীল্যান্সার ইত্যাদি জায়গায় কাজ করতে পারেন যেখানে অনেক ধরণের ক্লায়েন্ট রয়েছে যারা তাদের ভিডিওর জন্য বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইনকে মোশন বানিয়ে ভিডিওতে এড করতে চায় এইজন্য তারা এই কাজটি পারে এমন ডিজাইনের খোঁজে এ সকল মার্কেটপ্লেসে আসে আর তাই আপনি যদি ভালোভাবে কাজ পারেন তবে আপনি মার্কেটপ্লেসে একজন ফ্রীল্যান্সার হিসাবে কাজ করে ইনকাম করতে পারবেন।
তাছাড়া আপনি বিভিন্ন কোম্পানিতে একজন মোশন ডিজাইনার হিসাবে গ্রাফিক্স সেক্টরে চাকরি করতে পারবেন যার ফলে সেখান থেকেও টাকা ইনকাম করতে পারেন। তাই আপনি যদি কাজটি ভালোভাবে শিখতে পারেন তবে ইনকামের জন্য আপনাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। ফ্রিল্যান্সিং করে বা চাকরি করে আপনি আপনার ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।এবং নিজেকে দক্ষ একজন মানুষ হিসাবে গড়ে তুলুন।
মোশন গ্রাফিক্স এর ভবিষৎ কেমন ?
আপনি একজন মোশন ডিজাইনার হতে পারলে বর্তমানে আপনার চাহিদা রয়েছে কেননা আমরা বর্তমানে বিভিন্ন ইউটিউবে বা ফেইসবুক ভিডিওতে আমরা গ্রাফিক্স দিয়ে তৈরী মোশন ভিডিও দেখতে পাই যেটি ভিডিওটিকে আরো অনেক বেশি সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলতে সাহায্য করে তাই কোম্পানিগুলো এখন নিজেদের প্রমোশনাল ভিডিও বা পণ্যের বিজ্ঞাপন ভিডিওতে গ্রাফিক্সের সাহায্যে তৈরী মোশন তাদের ভিডিওতে এড করে যার ফলে তারা অডিয়েন্স এর কাছে নিজেদের আরো ভালোভাবে তুলে ধরতে পারে। ভবিষতে ভিডিওতে মোশন ডিজাইন করা ব্যবহারের চাহিদা আরো অনেক বেড়ে যাবে যার ফলে এই কাজের চাহিদা কখনো কমবে না বরং আরো অনেক বেশি বাড়বে তার সাথে বাড়বে এই সেক্টরের ডিজাইনারের সংখ্যা। তাই ভবিষতে এই সেক্টরটি আপনি যদি পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন তবে সেটি আপনার জন্য ভালো একটি সিদ্ধান্ত হবে। কেননা ২০২৩ সালে এই ইন্ডাস্টির মার্কেট ভ্যালু রয়েছে ১৮১.৩৮ বিলিয়ন ডলার যেটি খুবই সম্ভাবনাময় একটি মার্কেটের প্রমান। যেটি ২৮ সালের মধ্যে ২৮৪.৬২ বিলিয়ন ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে যা (২৩-২৮) সালের মধ্যে ৯.৪৩% বৃদ্ধি পাবে যে পরিসংখ্যানটি যারা মোশন ডিজাইন শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য খুবই ভালো একটি সংবাদ বলে ধরা যায় কেননা মার্কেট বৃদ্ধি না পেলে মানুষের আগ্রহও বৃদ্ধি পাবে না। তাই ভবিষৎ বিবেচনা করে এই ইন্ডাস্ট্রি খুবই সম্ভাবনাময়।
আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।