ইউটিউবার প্রতি মাসে লক্ষ্য টাকা ইনকাম করে এমন সংবাদ হয় তো শুনছেন। আসলে কি তাই ? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ । এক সময় কম বয়সী ছেলে মেয়েরা ইউটিউব এ চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড করতো কিন্তু এখন তা হয়েছে সকল শ্রেণীর, কর্মজীবী, সকল মানুষের জন্য ইনকামের উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। একজন কৃষক তার চাষাবাদ এর অভিজ্ঞতা ইউটিউবে শেয়ার করে মাসে ইনকাম করছে হাজার টাকা । একজন গৃহিণী তার রান্নার টিপস ইউটিউব এ চ্যানেল খুলে সবার সঙ্গে শেয়ার করে ইনকাম করছেন।
অর্থাৎ সর্বজনীন স্বীকৃত জনপ্রিয় পেশাগুলোর মধ্যে ইউটিউবিং একটি। এখানে দিন দিন কম্পেটিটর বেড়ে চলছে। তাই কম্পেটিটরকে ছেড়ে কীভাবে নিজের চ্যানেলকে প্রমোট করা যায় তা জানার বিষয়। ইউটিউবে সফল হতে আপনাকে ইউটিউবের আপডেট বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে হবে। আর এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব বা জানার চেষ্টা করবো যে ,সফল ইউটিউবার হওয়ার টিপস এবং উপায়।যেগুলো আপনার ইউটিউব এ ভিডিও প্রমোট, সফল হতে সাহায্য করবে। আসুন জেনে নেই সফল ইউটিউবার হওয়ার সেরা ১0 টি উপায়:
১। নিশ নির্ধারণ করুন :
ইউটিউবার হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলার আগে নির্ধারণ করুন নিশ। কোন ধরনের নিশ নির্বাচন করবেন ? বা কি ধরনের নিশ নিয়ে কাজ করলে ভালো হবে ? এই সব প্রশ্ন না করে চিন্তা করুন আপনি কোন বিষয়ের উপর পারদর্শী। আপনি যে বিষয় এর উপর এক্সপার্ট , সেটাকে নিশ হিসাবে নির্বাচন করুন। ধরুন আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এ এক্সপার্ট তাহলে এই সম্পর্কে ভিডিও তৈরি করে ইনকাম করতে পারেন। এক কথায় আপনি যা পারেন , যে বিষয়ে দক্ষ বা ভালো পারেন সে বিষয়ে আপনি অন্যকে শিখতে পারবেন। যে টপিক এর উপর জ্ঞান রাখেন তা নিশ হিসাবে চিহ্নিত করলে ভালো সফল হবেন।
২। আপনার অডিয়েন্স সম্পর্কে জানুন:
নিশ নির্ধারণ করার পর আপনাকে জানতে হবে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কারা ? কত বছর বয়সী মানুষদের জন্য আপনি ভিডিও তৈরি করছেন এবং আপনার ভিডিও এর বিষয়বস্তু কতটা উপকারী হবে আপনার অডিয়েন্সের জন্য? এটাও জানতে হবে যে ,আপনার নিশের বা বিষয়ে আপনার অডিয়েন্স কি কি জানতে চাচ্ছে। তাদের কোন বিষয় পছন্দ আর কোন বিষয় পছন্দ না।সঠিক অডিয়েন্স বাঁচে নেওয়ার মাধ্যমে সফলতার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাবেন।
এককথায় , আপনাকে অডিয়েন্স দের গুরুত্ব দিতে হবে এবং যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন । কারণ আপনি কিন্তু তাদের উপকারের জন্যই ইউটিউব চ্যানেল এবং ভিডিও বানিয়েছেন। তারা আপনার ভিউয়ার্স এবং সাবস্ক্রাইবার হবে।
৩। আপনার কম্পেটিটর কারা তা জানুন :
আপনার অডিয়েন্স সম্পর্কে জানার পর আপনার প্রথম কাজ হলো আপনার বিষয় এ কারা অলরেডি ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করছে তাদের সম্পর্কে জানা। তারা হচ্ছে আপনার কম্পেটিটর । খুঁজে বের করুন তাদের সফল হওয়ার রহস্য। তাদের ওয়েবসাইট দেখুন,আর্টিকেলগুলো পড়ুন। তাদের ভিডিওগুলো মনোযোগ সহকারে দেখুন। তাদের উইকনেস গুলো বের করুন। তাদের ভালো দিকগুলো বের করুন। এবার চিন্তা করুন কীভাবে আপনার কম্পেটিটর কে ছাড়িয়া আপনার ভিডিও প্রমোট করবেন। কোন বিষয়গুলো এড করলে অতি সহজে কম্পেটিটরকে ছাড়িয়ে আপনি সফল হতে পারবেন তা জানুন।
অনেক নতুন ইউটিউবার এই বিষয়গুলো নজরে নেন না । কেন জানি ইগনোর করে চলে এবং দিনশেষে ব্যর্থ হয়।তাই অবশ্যই আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে প্রতিযোগীদের । তারা আপনার নিশ বা বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে কি কি ভিডিও বানিয়েছেন ? তাদের ভিউ কীভাবে বাড়ছে ?তারা কীভাবে একটা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে? নিজেকে প্রশ্ন করুন , তাদের কনটেন্ট থেকে আপনার কনটেন্ট কেন আলাদা? এসব বিষয় জেনে নেওয়ার পর আপনি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন আনন্দের সাথে।
৪। নিজের ক্রিয়েটিভিটির বহি:প্রকাশ করুন :
জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে youtube একটি সুতরাং ইউটিউব এর মতো জনপ্রিয় ক্রিয়েটিভ প্লাটফর্মে ভালো করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ক্রিয়েটিভ বা সৃজনশীল মানুষ হতে হবে। আপনার চ্যানেলের জন্য নতুন নতুন আকর্ষণীয় , মজাদার ইউনিক ভিডিও তৈরি করতে হবে যা ইতিমধ্যে কেউ তৈরি করেনি । আপনার ভিডিও বা কনটেন্ট এর ভিতরে ইউনিকনেস আপনাকে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে তাই নিজের মধ্যে ক্রিটিভিটি খুঁজুন এবং তা বের করে সরিয়ে দিন , জানিয়ে দিন বিশ্বকে।
৫। এসইও ও ট্যাগ করুন :
সকলের জানা যে এসইও হলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। একমাত্র এসইও ফর্মুলাই পারে আপনার ভিডিওকে ভাইরাল করতে এবং অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে আপনার ভিডিও পৌঁছে দিতে।সব চেয়ে সহজভাবে ইউটিউব এসইও করা যায়। ইউটিউব এসইও বলতে, ভিডিওর টাইটেল, ট্যাগ, থাম্বনেইল, কি-ওয়ার্ড রিসার্চ , ডেসক্রিপশন এগুলো বুঝিয়ে থাকে। আপনাকে অবশ্যই কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করে টাইটেল এবং ডেসক্রিপশন সুন্দর করে লিখতে হবে। আর এর দরুন আপনার ভিডিওতে প্রচুর ট্র্যাফিক পাবেন।
৬। হাই কোয়ালিটি ভিডিও তৈরি করুন:
আপনি যে ভিডিও তৈরি করুন না কেন তা অবশ্যই হাই কোয়ালিটির হতে হবে তবে হা হাই কোয়ালিটি বলতে Full HD (1080p/4k) হতে হবে এমন কিছু না । যদি টাইটেল, থাম্বনেইল, ট্যাগ, ডেসক্রিপশন, ভিডিও টপিক, সাউন্ড কোয়ালিটি, ইত্যাদি ঠিক থাকে তাহলে 360p/480p রেজুলেশনের ভিডিও কাজে দিতে পারে এবং অনেক ট্র্যাফিক আস্তে পারে। মজার বিষয় হচ্ছে যদি আপনার কনটেন্ট ভালো না হয় তাহলে ট্র্যাফিক এসেও লাভ হবে না। তাই ট্রাই করুন কনটেন্ট এর মান বৃদ্ধি করার।
৭ । ভিডিও Length এর দিকে লক্ষ রাখুন :
ভিডিও অবশ্যই দশ মিনিটের বেশি হতে হবে। কারণ ইউটিউব দেখে যে ভিউ টাইম। একটা ভিউ ১ মিনিট ভিডিও দেখলো না কী ১৫ মিনিট। বেশি সময় ধরেই ভিডিও দেখুক ইউটিউব তা পছন্দ করে। ধরুন আপনি দশ মিনিটের একটি ভিডিও অনেক কষ্ট করে তৈরি করছেন এবং ইউটিউবে সাবমিট করছেন , তবে ভিউয়ার গণ শুধু ৩০ সেকেন্ড বা ৫০ সেকেন্ড অথবা এক মিনিট দেখে তারপর আস্তে করে ভিডিও থেকে চলে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন আপনার রিচ কমে যাচ্ছে ।
তখন youtube মামা বসে বসে তার এলগোরিদম দিয়ে বুঝতে পারছেন যে আপনার ভিডিওতে বিশেষ কিছু নেই যা দেখে দর্শকরা বেশিক্ষণ থাকছে না। অন্যদিকে ২০ মিনিটের ভিডিওটি অন্তত পাঁচ সাত মিনিট ধরেই লোকেরা দেখলে তখন youtube মামা অনেক মানুষের সামনে সাবজেক্ট করবে ফলে আপনার ভিডিওটি অতি তাড়াতাড়ি ভাইরাল হয়ে যাবে। এর এইজন্য ভিডিও Length এর দিকে লক্ষ রাখুন। দর্শক ধরেই রাখার জন্য হলেও ভিডিও বাড়াইতে হবে।
৮। সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন :
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার কারী এত বেশি যে কারা ব্যবহার করে না তা বের করা সম্ভব। আপনি নিজেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে ভিডিও শেয়ার করুন। এতে করে কি হবে জানেন ? আপনার ভিডিও কতটা ভালো বা কোয়ালিটি সম্পন্ন হয়েছে কি না তা বুজতে পারবেন। কীভাবে ? তা হচ্ছে যদি আপনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ই শেয়ার করতে না চান তাহলে ধরেই নিতে হবে আপনার নিজের পছন্দ হয়নি। একটু ভাবুনতো যে ভিডিও আপনার পছন্দ না সেই ভিডিও কি অন্য মানুষের পছন্দ হবে ?এইজন্য নিজের কাছে ভালো লাগে এমন কনটেন্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।
৯। সাম্প্রতিক ট্রেন্ড সম্পর্কে ভিডিও তৈরি করুন :
আপনি যে নিশ নির্বাচন করেছেন, সেই বিষয়ের উপর ট্রেন্ড গুলো নিয়ে কাজ করুন। কারণ আপনার অর্ডিয়েন্স যা চায় তাই দিতে হবে। তাদের সিগমেন্ট বোঝে কাজ করুন ।ধরুন, আপনি একজন ডিজিটাল মার্কেটার এখন এই বিষয়ের উপর ট্রেন্ডিং বিষয়ে ভিডিও তৈরি না করে হিরো আলমের মতো ভিডিও তৈরি করলে আপনার অর্ডিয়েন্স তা গ্রহণ করবে না পছন্দ করবেন না এটাই স্বাভাবিক । তখন আপনার আসল অডিয়েন্স হারায় যেতে পারে।অবশ্যই ট্রেডিং বিষয়ে লিখতে হবে তবে সেটা বুঝেশুনে ই তৈরি করুন।
বর্তমানে ট্রেডিং বিষয় এর উপর ভিডিও তৈরি করার মাধ্যমে সহজেই ভাইরাল হওয়া যায় ।বর্তমানে ট্রেডিং বিষয় বলো 'আয়মান সাদিক ও মুনজিরীন শহীদ আপুর বিয়ে ' কিছুদিন পর হয়ত অন্য কোন বিষয় ট্রেডিং হিসেবে থাকবে। যদি চ্যানেলের ভিডিও অতি তাড়াতাড়ি ভাইরাল করতে ইচ্ছুক হন তাহলে ট্রেডিং বিষয় নিয়ে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করুন। এটি আপনার চ্যানেলকে সহজভাবে প্রমোট করতে অনেক কার্যকর একটি উপায়।
10। ধৈর্য ধরুন :
একটা বা দুইটা ভিডিও তৈরি করে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দিলেন এরপর স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন যে আপনি এখন "সফল ইউটিউবার "হয়ে যাবেন, এমন স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দেন। এখানে সফল হতে অকাল্পনিক ধৈর্য ধরেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।ধৈর্য এর মতো মূল্যবান অভ্যাস যদি আপনার না থাকে তাহলে এটা আপনার জন্য না। আপনারা শামীমা শ্রাবনীর নাম শুনেছেন নিশ্চই। ওনার প্রথম ভিডিও গুলো কিন্তু বেশি ভিউ হয়নি। প্রায় ৪০-৫০ তা ভিডিও পাবলিশ করার পর ১ তা মাত্র ভিডিও ভাইরাল হয়। দেখুন তিনি যদি হাল ছেড়ে দিতেন , ধৈর্য না ধরতেন তাহলে আজ হয়ত আমি তাকে নিয়ে লিখতাম না। মজাই বিষয় হলো এখানেই যে , আপনাকে ধৈর্যের সাথে লেগে থাকতে হবে। তাহলে একদিন নয় , একদিন সফল হবেন ইনশাআল্লাহ
আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।