আপনি যদি একজন ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হন,তাহলে আপনাকে ভিডিও এডিটং সফটওয়্যার সম্পর্কে জানা দরকার। ভিডিও তৈরি করার সময় বিভিন্ন রকমের ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার বা online video editor ওয়েভ সাইট এর দরকার পরে। আমরা এই আর্টিকেলে কিছু ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো ।
ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার কি?
প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর ব্যতীত ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার সম্পর্কে খুব কম মানুষ জানে।কিন্তু ভিডিও এডিটিং সম্পর্কে আমরা সাধারানত সবাই কমবেশি জানি,একটি ভিডিও ফাইলকে আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য ভিডিও ক্লিপ ,মিউজিক ,ছবি ও শব্দগুলোকে একসাথে যুক্ত করে নতুন করার প্রক্রিয়া যা সঠিক ভাবে আমাদের অনুভূতি গুলো ফুটিয়ে তুলতে পারে একটি ভিডিওর মাধ্যমে ।অর্থাৎ একটি ভিডিও ক্লিপকে সুন্দর করে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়াই হলো ভিডিও এডিটিং আর এই ভিডিও কে সুন্দর ভাবে উপাস্থাপন করার জন্য ,ভিডিও গুলোকে একত্রিত করা এবং ম্যানিপুলেট করার জন্য যে মাধ্যম বা অ্যাপ্লিকেশন এর ব্যবহার করা হয়তাকেই ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার বলে।যেমন-Adobe Premiere Pro, OpenShot ,Hitfilm Express etc.
ভিডিও এডিটং কেনো শিখবো?
একবিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় ও চাহিদা সম্পন্ন পেশা হলো ভিডিও এডিটিং ।আপনি ভিডিও এডিটিং ব্যক্তিগত ও প্রফেশনাল উভয় কাজের জন্যই দক্ষতার সাথে শিখতে পারেন। মনের কোনে আসতেই পারে, ভিডিও এডিটিং শিখে কি হবে!! আমরা চারদিকে খেয়াল করলে দেখতে পাবো শিক্ষা ব্যবস্থা ,ব্যবসা -বানিজ্য , মিডিয়া জগতের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ ভিডিও কন্টেন্ট এর দখলে । বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী নিজেকে এগিয়ে রাখার জন্য ভিডিও এডিটির হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। চলুন আরও কিছু জেনে নেই ভিডিও এডিটিং সম্পর্কে যা আপনাকে ভিডিও এডিটিং শিখতে উৎসাহী করবেঃ
> ভিডিও ভাবপ্রকাশের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। ছবি বা ভিডিও দেখার মাধ্যমে আমরা যতটা সহজে একটা বিষয় জানতে বা বুঝতে পারি ,তা কোন লেখা বা শুনে বুঝতে পারি নাহ। এখন আমরা এই সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে , আমরা যদি সঠিক ভাবে একটি ভিডিও এডিট করে ,আমাদের কথাগুলো ,চিন্তা ভাবনা গুলো ভিডিওর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারি তাহলে মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পাবে।
> বর্তমানে মানুষের হাতে সময় অনেক কম,দেড় দুই পৃষ্ঠা লেখা পড়ার থেকে তারা কম সময়ে একটা ভিডিও দেখতে বেশি পছন্দ করছে ।কোনো কিছু জানার প্রয়োজন পড়লে Youtube বা facebook তা সার্চ করে দেখে নেয়।এর মধ্য আবার জনপ্রিয় আর একটি বিষয় এড হয়েছে শর্ট ভিডিও ,মানুষ এখন বেশি শর্ট ভিডিওতে আগ্রহী হচ্ছে।
> ভিডিও এখন একটি সহজ লভ্য বিষয়।প্রায় ৯০% মানুষ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করছে যেমন - মোবাইল ফোন ,ট্যাবলেট,ল্যাপটপ ,আর দিন দিন এর ইউজার বেড়ে চলছে।আপনি চাইলে খুব সহজেই মানুষের কাছে আপনার ভিডিও কন্টেন্টি পৌছে দিতে পারবেন।
> ভিডিও এডিটিং এর জন্য আমাদের বেশি খরচের দরকার পড়ে নাহ একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ,হাতে থাকা স্মার্ট ফোন দিয়েও ভিডিও এডিটিং করা যায়।যদিও তা আমাদের Avatar এর মতো ভাইবস দিবে নাহ।তবে হ্যা ইচ্ছাশক্তি আর আর ধৈর্য থাকলে আমরা অনেক ভাল করতে পারবো।প্রথম অবস্থায় এটাতেই চলে যাবে।
> ভিডিও এডিটিং শিখে আপনি যদি মার্কেট প্লেসে কাজ করতে চান ,তাহলে আপনাকে ভিডিও এডিটিং দক্ষ হতে হবে। বর্তমানে ভিডিও এডিটিং এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।আপনারা জেনে অবাক হবেন ,২০২৩ এর জুলাই মাস পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিডিও এডিটর হিসাবে ৩২,৫৩৩ এর বেশি এডিটর নিযুক্ত রয়েছে।এর মধ্যে মহিলা রয়েছে ২৪.১% ও পুরুষ ৭৯.৯% আছে। fiverr ,upwork এর মতো মার্কেট প্লেসে কাজ করার সুবর্ন সুযোগ। একজন ভিডিও এডিটরের প্রতিদৈনিক আয় $175 ডলার।বর্তমানে আমরা ব্রাউজারে অনেক ধরনের ভিডিও এডিটর সফটওয়্যার পেয়ে থাকি।এর মধ্য কিছু ফ্রি এডিটর এবং পেইড এডিটিং সফটওয়্যার পাওয়া যায়। নিম্নে তা আলোচনা করা হলোঃ
ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
আমরা প্রায় সময় ভিডিও করতে যাই বা ইউটিউবের জন্য বিভিন্ন ভিডিও বানাতে যাই। তখন আমাদের একটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এর দরকার পড়ে। আর তখন আপনি এমন এক ধরনের টুলস খুজবেন যেখানে আপনার টাকা খরচ হবে নাহ,আবার আপনার ভিডিও এডিটিং ও করা হবে আর শেখাও হবে।চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু ফ্রি ভিডিও এডিটর অ্যাপ্লিকেশন এর কথা।
1. OpenShot
Openshot হলো ইউটিউবের জন্য সেরা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার গুলোর একটি এখানে অসংখ্য পরিমানে ইউজার ইন্টারফেজ ও সীমাহীন এডিটিং ট্রাক পাওয়া যায়। ওপেনশট একটি ফ্রি YouTube ভিডিও এডিটর ।যেখানে, আপনার প্রত্যাশার চেয়ে আরও উন্নত বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ প্রোগ্রামটিতে বিভিন্ন রঙের একত্রিত উপাদান, ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভার, কীফ্রেম অ্যানিমেশন এবং 400 টিরও বেশি প্রিসেট আছে। এটি আনলিমিটেড এডিটিং ট্র্যাকও অফার করে।
2. Hitfilm Express
Hitfilm express একটি ফ্রি এডিটিং সফটওয়্যার ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট কম্পোজিটর।বিগিনারদের জন্য সেরা BFx সফটওয়্যার টুলসকিট হল Hitfilm express ।এর মধ্য আরও রয়েছে কম্পোজিটির , গ্রীন স্ক্রীন রিমুভার,3D মডেলিং, অ্যানিমেশন এবং ফিজিক্স সিমুলেশন । এই সফটওয়্যারের একটি বড় সুবিধা হলো আপনি ওয়াটার মার্ক ছাড়া ভিডিও এডিট করতে পারবেন। উন্নত ট্রাক পাওয়ার জন্য আপনাকে চার্জ করতে হবে।
3. Lightworks
Lightworks বিগিনারদের জন্য একদম পারফেক্ট ,স্ট্রীমলাইনড সফটওয়্যার ।ভিডিও এডিটিং শুরু করার জন্য এটি একটি ফোকাসড টুলসেট ওফার করে। lightworks একটি ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার যার কোনো ওয়াটার মার্ক নাই কিন্তু উচ্চমানের ভিডিও তৈরি করার জন্য ব্যপক পরিমানে টুলস সরবরাহ করে।
4.ShotCut
Shotcut হলো আরো একটি ফ্রি এডিটিং সফটওয়্যার। ক্রস-প্ল্যাটফর্ম ভিডিও, অডিও এবং ইমেজ এডিটিং প্রোগ্রাম এই টুলস গুলা উচ্চ-মানের YouTube ভিডিও এডিট করে।সফটওয়্যারটির সবচেয়ে অসাধারণ দিক হলো, এখানে নেটিভ টাইমলাইন এডিটিং ফিচার রয়েছে,যার জন্য আপনাকে নতুন করে এখানে ভিডিও ফাইলগুলো ইমপোর্ট করতে হবে না।
5. Clipchamp
সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট ক্রিয়েটররা প্রাথমিক ভাবে ফ্রী ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার হিসাবে clipchamp ব্যবহার করতে পারে। clipchamp স্টক ভিডিও,অডিও,ইমেজ ও গিফ মেকার এছাড়া আরও অনেক ধরনের ফ্রি টুলস পাওয়া যায়।
6. Apple iMovie
macOS ও ioS এর জন্য সেরা ফ্রী ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার হলো Apple iMovie । যার সাহায্য আপনি 4k ভিডিও এডিট তৈরি করতে পারবেন। এর ইউজার ইন্টারফেজ খুব সহজ ,বিগিনাররা খুব সহজে আয়ত্ত করতে পারবে। সফটওয়্যারটি থেকে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়া আইফোন বা আইপ্যাড দিয়ে ভিডিও এডিটিং করে ম্যাকবুকে নিতে পারবেন।
পেইড ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
হাই কোয়ালিটি ভিডিও তৈরি বা বিভিন্ন ওয়েভ সাইটে পাবলিশ করার করার জন্য আপনাকে ভিডিও তৈরি করার জন্য ভাল মানের ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এর দরকার পড়বে ।প্রফেশনাল ভিডিও মেইক করার জন্য পেইড এডিটিং সফটওয়্যার এর প্রোয়জন হয়।
1. Adobe Premiere Pro
ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এর মধ্য প্রফেশনাল এডিটরদের পছন্দের তালিকায় প্রথম রয়েছে adobe premiere pro . এই সফটওয়্যারটি থেকে প্রফেশনাল সকল ধরনের কাজ করা যায়। এর বিশেষ কিছু সুবিধা হলো -সহজ ইন্টারফেজ,অনেক বেশি টুলস পাওয়া যায়,অসংখ্য মাল্টিক্যাম এঙ্গেল পাওয়া থাকে।
2. Filmora
Filmora একটি ভিডিও এডিটর যা সহজে ব্যবহারযোগ্য ও হাইকোয়ালিটি এডিটিং করা যায়।এটি বিগিনার ও প্রফেশনাল উভয় কাজেই ব্যবহার করা যাবে ।ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস ,যা কাজ করতে সাহায্য করে। MP4,AVI,MOV এছাড়াও আরও অনেক ফরম্যাটে ভিডিও এডিট করার সুযোগ থাকে ।এডভান্সড লেভেলে কাজ করার জন্য রয়েছে Chrome Key effect,image stabilization ও Time -lapse etc.এছাড়া 300 টির বেশি ফ্যাশন ফিল্টার রয়েছে।
3 .DaVinci Resolve
DaVinci Resolve হল একটি কালার গ্রেডিং, কালার কারেকশন, ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট এবং অডিও পোস্ট-প্রোডাকশন ভিডিও এডিটিং অ্যাপ্লিকেশন macOs উইন্ডোজ এবং লিনাক্সের জন্য সাধারাণত ব্যবহার করা হয়। এটি প্রফেশনাল ও নন-প্রফেশনাল উভয়ই ইউজ করতে পারে। এখানে মোশন গ্রাফিক ও অডিও এডিটিং টুল পাওয়া যায়।
4. CyberLink PowerDirector 365
PowerDirector ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার টি একবার সাবস্ক্রিপশন করে কিনলেই হয় ,পরবর্তিতে চার্জের দরকার পড়ে নাহ।এটি থেকে নরমাল ভিডিও ট্রিম থেকে শুরু করে প্রো লেভেলের ভিএফএক্সের কাজও করতে পারবেন।এখানে বেশ কিছু ইফেক্ট ও AI টুলস পাওয়া যায়। এছাড়া স্ক্রিন রেকর্ডিং এর সুবিধা আছে।
5. Movavi Video Editor Plus
যারা শখ করে ভিডিও এডিটিং করে বা ইউটিউবার দের জন্য আদর্শ একটি সাইট হলো Movavi Video Editor Plus। এখানে বেশ কিছু গুড লুকিং ইফেক্ট ও ট্রানজিশন আছে। সরাসরি ইউটিউব এবং ভিমোতে রেন্ডার করা ভিডিও আপ্লোডের অপশন তো আছেই। এছাড়াও অনেক সুবিধা আছে যেমন- ক্রোমা-কি ক্যাপিবিলিটি,মোশন ট্র্যাকিং এবং পিকচার-ইন-পিকচার টু্ ও সাউন্ড সহ ট্রানজিশন পাওয়া যাচ্ছে।
6. Kine Master
প্রফেশনাল ভিডিও মেইক করার জন্য kine master ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারটি বেশ জনপ্রিয়। Drag-n-drop টেকনিকের মাধ্যমে বিভিন্ন মিডিয়াতে ফাইল ইম্পোর্ট করা যায়।এর সাথে রয়েছে সাবটাইটেল যুক্ত করার সুবিধা।এছাড়াও আছে real- time recording ,animations styles ,multi layers ,themes etc.
বর্তমানে বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের AI টুলস আপডেট হয়েছে ।AI টুলস ব্যবহার করে ভিডিও এডিটিং করছে ।কিন্তু আপনি যদি হাই কোয়ালিটি ভাবে ভিডিও এডিট করতে চান এবং ভিডিও এডিটর হিসাবে ক্যারিয়্যার গড়তে চান ।তাহলে আপনাকে ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এর ব্যবহার জানতে হবে এডিটিং এর কাজে ব্যবহার করতে হবে।
আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।