বর্তমানে উন্নতমানের ভিডিও আমাদের আকষর্ণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।মানুষ বর্তমানে কম মানের ভিডিও পছন্দই করে না।যে কোনো ধরনের ক্ষুদ্র ত্রুটিও যদি হয় তাহলে সেই ভিডিও গুলো মানুষ পছন্দ করে না।এই জিনিস গুলোকেই ভালোভাবে সম্পূর্ণ করা একজন ভিডিও এডিটর এর কাজ।আকর্ষণীয় ভিডিও এবং অ্যানিমেশন বানানোর জন্য এবং ভিডিও সংক্রান্ত গ্রাফিক্স কাজের দেখভাল এর জন্য ছোট বড় সকল কোম্পানি গুলোতে একজন ভিডিও এডিটর প্রয়োজন ব্যাপক।এর সাথেও চলচ্চিত্র,নাটক এগোলো নিয়ে কাজ করতে গেলেও ভিডিও এডিট সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
ভিডিও এডিটিং কি
প্রথমত এক কোথায় বলতে গেলে,একটি ভিডিও কে মানুষের কাছে পরিপূর্ণ ও আকর্ষণীয় ভাবে তুলে ধরার জন্য প্রধান ভিডিওকে ম্যানিপুলেট করে একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও তৈরি করার নাম ভিডিও এডিটিং।
উপরের কথাটি হলো এক কোথায় উত্তর এখন আরো একটু ভালো করে আপনাদের বুঝানোর জন্য একটু বর্ণনায় যাই।বর্তমানে ইউটিউব এবং টেলিভিশনে তো আমরা প্রচুর নাটক,সিনেমা এবং মিউজিক এর প্রচুর ভিডিও দেখি।এই ভিডিওগুলো একেকটা একেক সময়ের হয়ে থাকে।কিন্তু এই ভিডিও গুলো যখন প্রস্তুত করা হয় বা প্রথম অবস্থায় থাকে তখন দীর্ঘ সময়ের থাকে।পরে ওগুলো থেকে অনেক অংশ কাটা হয় আবার প্রয়োজন মতো অনেক অংশ জোড়া দেওয়া হয়।আবার যদি প্রয়োজন হয় তাহলে কোনো মিউজিক বা সাউন্ড যুক্ত বা কাটা হয়।এর সাথে কিছু গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজ করে একে পরিপূর্ণ শুধু রূপে এবং অধিক আকর্ষণীয় করে মানুষের সামনে তুলে ধরার প্রক্রিয়াকে ভিডিও এডিটিং বলে।
এই কাজ করার জন্য একটি পিসির কনফিগারেশন কেমন হওয়া দরকার , ইতিমধ্যে ভিডিও এডিটিং এর কাজ সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা পেয়েছি।এখন আশাযাক এই এডিটিং এর কাজ করার জন্য একটি পিসির কনফিগারেশন কেমন হওয়া দরকার।
ভিডিও এডিটিং এর কাজ করার জন্য একটি পিসির কনফিগারেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কারণ,আপনি যেই কাজটি করবেন সেই কাজের জন্য সেই ডিভাইসটি যদি পারফেক্ট না হয় তাহলে আপনি কাজ করে মজা পাবেন না।আপনার যদি মোটামুটি কনফিগারেশন এর একটি পিসি থাকে তাহলেই আপনি এই এডিটিং এর কাজ করতে পারবেন।কিন্তু আপনি প্রায় সব ধরনের এডিটিং এর কাজ করতে হলে আপনার পিসিটি একটু ভালো কনফিগারেশন হতে হবে,নিচে তার বর্ণনা দিলাম -
প্রসেসর - AMD অথবা Intel Ryzen 7 3800X
সিপিইউ কুলার - Thermaltake UX200 ARGB #CL -P065 -AL12SW - A
মাদারবোর্ড - Asus ROG STRIX B550 -F GAMING DDR4
গ্রাফিক্স কার্ড - ZOTAC GAMING GeForce GTX 1660 super AMP 6GB GDDR6 Graphics card # ZT -T16620D -10M
রেম - G.Skill ripjaws V 16GB DDR4 3200mhz #F4 - C16D 3200GVK অথবা সর্বনিম্ন 16 GB থাকতে হবে এবং এর সাথে Heatsink থাকলে ভালো হয়।
এসএসডি - Transcend 220s 256gb M.2 2280 PCle Gen 3 * 4 SSD Drive
এইচডিডি - Toshiba 1 TB # DTO1ACA100/HDWD110UZSVA
অপটিক্যাল ড্রাইভ - Transcend TS8XDVDS - K
পাওয়ার সাপ্লাই - Cooler master MWE 550W V2 #MPE - 5501 - ACABW - BIN
কেসিং - Cooler Master Master Box MB311L ARGB black #MCB - B31 - KGNN - S02
কিবোর্ড এবং মাউস - A4Tech FG 1010 Black - Blue wireless keybord and mouse combo
উপরের কনফিগারেশন গুলো নিয়ে আপনার সুবিধামতো যেকোনো মনিটর এর সাথে ব্যবহার করলে এডিটিং এর জন্য একটি ভালো মানের পিসি হয়ে যাবে।আরেকটি জিনিস মাথায় রাখবেন উপরে যে কনফিগারেশন গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম তা ল্যাপটপ এর জন্য অনেক বেশি ব্যয়বহুল এবং কিছু কিছু ফিচার তো ল্যাপটপ এ সাপোর্ট করানোই অনেক দুরূহ ব্যাপার।তাই আমার মতে এই কাজের জন্য পিসি হচ্ছে বেস্ট চয়েজ।
ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
ভিডিও এডিটিং এর জন্য সফটওয়্যার এর প্রয়োজন।অনেক সফটওয়্যার আছে যেগুলো দিয়ে এডিটিং এর কাজ করতে হয়।এর মধ্যে ২ ধরনের সফটওয়্যার আছে ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এবং পেইড ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার।নিচে এগুলো নিয়ে একটু বিস্তর বর্ণনা দেওয়া হলো -
ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
বর্তমানে এমন কিছু ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার যাচ্ছে যা দিয়ে খুব সহজেই এডিটিং করা যায়।যেমন -
VSDC free video editor : এই সফটওয়্যারটি 2011 সালে যাত্রা শুরু করে।এই সফটওয়্যার এর এডিটিং কোয়ালিটি বেশ ভালো।youtube এর জন্য এটির বিশেষত্ব দারুণ।ফ্রি হলেও এই সফটওয়্যার এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক।
openshot softwar : এই সফটওয়্যারটি ২০০৮ সালে জোনাথন থমাস এটি আবিষ্কার করেন।অন্যসব ফ্রি সফটওয়্যার এর মধ্যে এই সফটওয়্যার এর টুলের পরিমাণ বেশি।এর মাধ্যমে খুব সহজেই ভিডিও এবং অডিও নতুন ফাইল যুক্ত করা যায় এবং খুব সহজে জোড়া দেওয়া যায়।
Lightworks softwar : আপনি যদি প্রফেশনাল ভিডিও এডিট করতে চান তাহলে এই সফটওয়্যারটি আপনাকে খুব ভালো পার্ফমেন্স দিবে।হলিউড এর বিখ্যাত সিনেমা " উলফ অফ ওয়াল স্ট্রিট " এবং " পাল্প ফিকশন " এই সফটওয়্যার দিয়ে এডিট করা হয়েছিল।১৯৮৯ সালে এটি প্রথম যাত্রা শুরু করে।
Shotcut softwar : নতুন এডিটরদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় একটি সফটওয়্যার।এই সফটওয়্যার এ ওয়াটারমার্ক ছাড়াই ভিডিও ফাইল সেভ করা যায়।এখানে নেটিভ টাইমলাইন এডিটিং ফিচার থাকায় নতুন করে ভিডিও ফাইলগুলো ইমপোর্ট করতে হয় না।
Apple imovie softwar : এর ইউজার ইন্টারফেস খুব সহজ।এর মাধ্যমে 4k ভিডিও এডিট করা সম্ভব।নতুন এডিটরদের জন্য এটি ব্যাপক সুবিধা জনক।এর মাধ্যমে আইফোন,আইপ্যাড দিয়ে এডিট শুরু করে পরে তা খুব সহজেই ম্যাকবুক এ ট্রান্সফার করা যায়।আপেল প্রতিষ্ঠান এটি সর্ব প্রথম বাজারে আনে।
apple final cut pro : এই সফটওয়্যারটি পেশাদার এডিটর এর কাছে বেশ জনপ্রিয়।এর মধ্যে ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও,মাল্টি ক্যামেরা অপশন এবং আরো আছে ট্র্যাকিং মোড,কালার কালেকশন মোড এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ফিচার গুলো আছে।যার মাধ্যমে একটি ভিডিওকে সিনেমেটিক লুক দেওয়া যায়।ম্যাক্রোমিডিয়া ১৯৯৮ সালে এটি বাজারে আনেন।
video Grabber : এটি একটি অনলাইন ভিডিও এডিটর।এই সফটওয়ারটির মাধ্যমে সাধারণত ভিডিও থেকে GIF বানানো,ভিডিও থেকে শুধু অডিও অংশটুকু কেটে নেওয়া,ভিডিও ক্রপ করা ও রোটেট করা এবং সব টাইটেল যুক্ত করার কাজ করা হয়ে থাকে।
Blender softwar : এই সফটওয়্যারটি 2D এবং 3D অ্যানিমেশন কাজ করার জন্য খুব জনপ্রিয়।এটি শেখার জন্য বেশ কিছুদিন সময় লাগলেও লেন্স কারেকশন,স্পিড কন্ট্রোল সহ হাজারো অপশন এর মধ্যে পাওয়া যায়।টন রোসেনডাল ,১৯৮৯ সালে এটি তৈরি করেন।
পেইড ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার
উপরে তো আলোচনা করলাম ফ্রি এডিটিং সফটওয়্যার নিয়ে।এখন আশা যাক কিছু পেইড এডিটিং সফটওয়্যার নিয়ে অর্থাৎ যে সফটওয়্যারগুলো টাকা দিয়ে কিনতে হবে -
Adobe Premiere Pro : এটির মধ্যে সহজ ইন্টারফেস এবং বেশ কিছু টুল পাওয়া যায় যা অন্য কোনো পেইড সফটওয়্যার এ পাওয়া যায় না।এবং এতে অসংখ্য মাল্টিকাম এঙ্গেল ব্যবহার করা যায়।যদিও এতে সাউন্ড ইফেক্ট সেম্পল পাওয়া যায় না এবং নতুন এডিটর দের জন্য এটি প্রথমে কঠিন হতে পারে।
Cyberlink PowerDrictor : অনেক বেশি ফিচার থাকার কারণে প্রথমে একটু বুজতে অসুবিধা হলেও এতে প্রজেক্ট খুব দ্রুত রেন্ডার করা যায়।এতে মাল্টিকাম ও মোশন ট্রেকিং এবং স্কিন রেকর্ডিং এর সুবিধাও আছে।
Corel Videostudio ultimate : যারা এডিটিং এর কাজে বেশ পারোদোশী এবং যারা প্রফেশনাল ইউটুবারএই সফটওয়্যারটি মূলত তাদের জন্য।এতে ফাস্ট রেন্ডারিং সুবিধা,৩৬০ ডিগ্রি ভি আর,4k আল্ট্রা এইচডি এবং 3D মিডিয়া সাপোর্ট করে।কিন্তু এটির অডিও ফিচার খুব বেশি সমৃদ্ধ না এবং এটি হাই ডিপিআই মনিটরে তেমন ভালো চলে না।
Movavi Video Editor plus : বেশ কিছু গুড-লুকিং ইফেক্ট এবং ট্রানজিশন এর জন্য প্রফেশনাল এডিটরদের জন্য এটি বেশ পছন্দের সফটওয়্যার। এটি একবার কিনে বাকি জীবন এটি ফ্রি ব্যবহার করা যায়।এতে রেন্ডারিং কিছুটা ধীর গতিতে হলেও,ক্রোমা-কি কাপ্যাবিলিটি,মোশন ট্রেকিং ও পিকচার-ইন -পিকচার টুল এবং সাউন্ড সহ ট্রানজিশনও আছে।
উপরের এই সফটওয়্যার গুলো ছাড়াও দিন দিন আরো নতুন সফটওয়্যার বাজারে আসছে।
মোবাইল দেয়া কি ভিডিও এডিটিং করা যায়?
যদি এই প্রশ্নটি আজ থেকে আরো কয়েক বছর আগে করা হতো তাহলে বলতাম না।কিন্তু বর্তমানে অনেক আধুনিক ফোনের মাধ্যমে এখন এডিটিং এর কাজ খুব সহজে করা যায়।মোবাইল ফোনের প্লে স্টোরে গেলে মোবাইলে ভিডিও এডিটিং এর জন্য অনেক সফটওয়্যার পাওয়া যায়। যেমন ধরেন - FilmoraGO,Adobe Premiere Clip,Video Show,Kine Master,Quik,VIVA Video ইত্যাদি সহ আরো অনেক সফটওয়্যার।
ভিডিও এডিটিং শিখে কীভাবে আয় করা যায় এবং এর ভবিষ্যৎ কি?
বর্তমানে মানুষ পড়ার থেকে ভিডিও দেখে বেশি মজা পায়।মানুষ এখন খবর পড়ার চেয়ে খবর দেখে বেশি।বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক টিভি চ্যানেল আছে,যেখানে রয়েছে দক্ষ এডিটরদের জন্য ভালো টাকা আয় করার সুজোক।যেখানে এডিটররা পার্ট টাইম এবং ফুল টাইম করে আয় করতে পারে।এছাড়াও অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে আছে ফ্রীলেনসিং করে আয়ের সুযোগ।
এরপরে আশাযাক এর ভবিষ্যৎ নিয়ে,মানুষ এখন হাই কোয়ালিটির ভিডিও এতো বেশি পছন্দ করে যা জানার কারো বাকি নেই।সামনের দিনগুলোতে এর চাহিদা আরো বাড়বে।যার কারণে দিন দিন এডিটর দের প্রয়োজনীয়তা আরো বাড়ছে।
যাক,ভিডিও এডিটিং নিয়ে অনেক কথা হলো।এখন ইতি টানা যাক।কারণ ভিডিও এডিটিং এর পিসি কনফিগারেশন নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও এর আদ্যোপান্ত নিয়ে মোটামুটি আলোচনার চেষ্টা করেছি।tobe পরিশেষে কিছু কথা না বললেই না,বর্তমান সময়ে ভিডিও এডিটিং খুবই চাহিদা পূর্ণ একটি প্লাটফর্ম।তাই ইচ্ছা থাকলে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করুন এই প্লাটফর্ম এ পথচলা।যেহেতু এর প্রসার নিয়ে সন্দিহান নেই।তাই বলাই যায় ধর্য ধরে সামনে অগ্রসর হন ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবেই।
আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।