রোবোটিক্স হচ্ছে প্রযুক্তির ওই শাখা যেখানে কাজ করে রোবট তৈরি করা সম্ভব। বর্তমানে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার এই শাখাটি আমাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি নাম। রোবট নিয়ে সারাবিশ্বের মানুষের আগ্রহের কোনো কমতি নেই বরং তা নিয়ে মানুষের আগ্রহ দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশের মানুষও রোবট নিয়ে অনেক বেশি আগ্রহী যা আমরা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ৫ তারিখ রোবট সোফিয়া যখন বাংলাদেশে এসেছিল তখন আমরা সেটি দেখে বুঝতে পারি। রোবট সোফিয়াকে বাংলাদেশে আনতে প্রায় ১ কোটি টাকার উপরে খরচ হয়েছিল।
রোবোটিক্স কি ?
রোবোটিক্স বর্তমান প্রযুক্তির অন্যতম সেরা একটি বিস্ময়। যা বর্তমানে আমরা রোবট দেখলেই বুঝতে পারি। এই রোবট হলো এমন একটি সিস্টেম যার মাধ্যমে মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে প্রতিস্থাপন করার জন্য কাজ করা হয়। যেমন বাংলাদেশে যখন রোবট সোফিয়া আসলো তখন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাথে ২ মিনিট সময় কথা বলেন। তিনি তাকে কিছু প্রশ্ন করেন যেমন : প্রধানমন্ত্রী তাকে জিজ্ঞাসা করেন যে কেমন আছো? সোফিয়া ইংরেজিতে উত্তর দেয়, ভালো, আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমি আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করেন তুমি আমাকে কীভাবে চেনো? তখন সোফিয়া ইংরেজিতে বলে আমি জানি আপনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, আপনি মাদার অব হিউম্যানিটি। এ ছাড়াও আপনার নাতনির নাম সোফিয়া।যেটি যে সঠিক একটি উত্তর ছিল তা আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিশ্চিত করেন।
রোবট বর্তমানে আমাদের কাজকে আরো অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছে আর তাই বর্তমানে আমরা পৃথিবীর বড় বড় সব ইন্ডাস্ট্রিগুলোর উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি রোবটের ব্যবহার দেখতে পারি যার ফলে কোম্পানিগুলো অতি স্বল্প সময়ে অনেক বেশি উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে। মানুষ যেমন কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে রোবট কিন্তু সেরকম নয় রোবট দিয়ে বিরতিহীন ভাবে কাজ করিয়ে নেয়া যায় যার ফলে দিনে দিনে রোবট অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
তাছাড়া বিনোদন জগতেও রোবট দিয়ে তৈরি বিভিন্ন সিনেমা আমাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। যেমন রজনিকান্ত এর রোবট সিনেমাগুলো তুমুল জনপ্রিয় সিনেমা ফ্র্যাঞ্চাইজ যা ভারতসহ অন্যান্য অনেক দেশগুলোতেও তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে বাংলাদেশেও যেটি খুবই জনপ্রিয় ছিল। তাছাড়া যারা সায়েন্স ফিকশন পছন্দ করে কিন্তু টার্মিনেটর সিনেমাটি দেখেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যেটিও ছিল আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার অভিনীত সায়েন্স ফিকশন ও অ্যাকশন ধর্মী সিনেমা। তাছাড়া কিংবদন্তি পরিচালক জেমস ক্যামেরনের "Avatar" যা সর্বকালের অন্যমত সেরা ব্যবসাসফল সিনেমা ছিল সেখানেও আমরা মানুষ চালিত রোবট দিয়ে যুদ্ধ করতে দেখি। এমন আরো অনেক সিনেমাতেও আমরা রোবটের ব্যবহার দেখি।
রোবোটিক্স এর ইতিহাস :
রোবট আবিষ্কারের পর থেকেই রোবট নিয়ে মানুষের মাঝে আগ্রহের কোনো কমতি নেই। তবে এই রোবট বানানোর জনক কে এই নিয়ে সবার মাঝে বিতর্ক দেখা যায়। কিন্তু যে জিনিসটি নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই সেটি হলো আমরা বর্তমানে যে ডিজিটালি ও প্রোগ্রামযোগ্য রোবট দেখতে পাই সেটি ১৯৫৪ সালে জর্জ ডিভোল সর্বপ্রথম তৈরি করেন।তবে ১৯২০ সালে কারেল কাপেক রোবট শব্দটির সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন।
তাই জর্জ ডিভোল কে রোবটিক্সের জনক বলেও মনে করা হয়। ১৯৬৯ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র ভিক্টর শিইমানম্যান একটি স্ট্যানফোর্ড আর্ম তৈরি করেন যা ছিল একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রোবটিক আর্ম।
রোবোটিক্স কীভাবে কাজ করে:
রোবটের নকশা ডিজাইন রোবট নিয়ে গবেষণা এই সমস্ত কাজ যে বিষয়টির আওতাধীন তাই হলো মূলত রোবোটিক্স। রোবট কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত হয় যার মাধ্যমে রোবটকে আপনি যখন কিছু বলেন সে সেটা করতে পারে। এখন আমরা জানবো একটি রোবট কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে :
নকশা তৈরি : একটি রোবট তৈরি করতে হলে প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হলো নকশা তৈরি করা কেননা একটি রোবটের লুক কেমন হবে তা আপনি নকশা করা ছাড়া বুঝতে পারবেন না। তাই প্রথমে রোবটের একটি নকশা তৈরি করে সে অনুযায়ী বাকি কাজ করতে হবে ।
সেন্সর : অনেকগুলো সেন্সরের সাহায্যে একটি রোবট কাজ করে। রোবট তার আশেপাশের পরিবেশ বুঝতে সেন্সরের দরকার পড়ে ক্যামেরা, রাডার, টাচ এ ছাড়াও আরো অনেক ধরনের সেন্সর অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যার মাধ্যমে রোবট আশেপাশের ডেটা সংগ্রহ করতে পারে এবং সে অনুযায়ী সে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া জানাতে পারে।
অ্যাকচুয়েটর : জিনিসটি হয়তো অনেকেই বুঝতে পারছেন না তবে এটি খুবই সহজ একটি জিনিস। অ্যাকচুয়েটর হচ্ছে রোবটের হাত-পা নাড়ানোর জন্য বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মানুষের মতো করে নাড়াচাড়া করার জন্য যে প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করা হয় তাই অ্যাকচুয়েটর।
কন্ট্রোল সিস্টেম : রোবটের মস্তিষ্ককে মূলত কন্ট্রোল সিস্টেম বলা হয়। এই সেন্সরকে কাজে লাগিয়ে রোবট তার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে পারে যার ফলে রোবট কে দেখে মনে হয় যে সে অনেকটা মানুষের মতোই কাজ করছে।
পোগ্রামিং : রোবট যদিও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে চলে কিন্তু তারপরও আদতে সেটি একটি মেশিন ছাড়া অন্য কিছুই না। তাই কম্পিউটার, মোবাইলের মতো মেশিনগুলো যেমন প্রোগ্রাম ছাড়া চলতে পারে না তেমনি একটি রোবট তৈরির করার সময় তার মধ্যে প্রোগ্রাম করা হয়। যার ফলে রোবটটি প্রোগ্রাম অনুযায়ী কাজ করতে পারে।
পাওয়ার সাপ্লাই : মানুষ যেমন খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে সেখান থেকে পুষ্টিগুণ পায় এবং সেটি থেকে কাজ করার শক্তি অর্জন করতে পারে। সেভাবে একটি রোবট চলতেও শক্তির প্রয়োজন পড়ে রোবটের শক্তির উৎসাহ হলো পাওয়ার সাপ্লাই যা বিদ্যুৎ থেকে আসে বিভিন্ন ব্যাটারি বা সোলার সিস্টেম এ ক্ষেত্রে কাজে লাগে।
যোগাযোগ : আমরা দেখতে পাই যে নাসা মহাকাশে বা বিভিন্ন গ্রহে নানান ধরনের রোবট পাঠায়। যখন রোবটটি গন্তব্য স্থলে পোঁছে যায় তখন নাসা ওই রোবটের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয় কেননা নাসা রোবট থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে আর এই যোগাযোগ সম্ভব হয় ওয়াইফাই, ব্লুটুথ বা বিভিন্ন ওয়্যারলেস প্রযুক্তির মাধ্যমে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা: রোবটের মতো অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি মেশিনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। রোবটের মধ্যে ইমার্জেন্সি স্টপ বোতাম সেট করা হয় তাছাড়া রোবটের সেন্সরগুলো কোনো ধরনের বিপদ আসলে রোবটকে সিগন্যাল প্রদান করে যার মাধ্যমে রোবট তার মধ্যে থাকা নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো কাজে লাগাতে পারে।
রক্ষণাবেক্ষণ : অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মতো রোবটকেও মাঝে মাঝে আপডেট করতে হয় এর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় কোনো সমস্যা থাকলে সেটি সমাধান করতে হয়। এই ধরনের কার্যপ্রণালি ব্যবহার করে একটি রোবট কাজ করে।
রোবোটিক্স কি হুমকি নাকি আশীর্বাদ :
রোবট শব্দটি শুনলেই আমরা চিন্তা করে থাকি যে মানুষের বিকল্প। কিন্তু সত্যিকার অর্থে মানুষের বিকল্প হয় না এই রোবট কিন্তু মানুষেরই সৃষ্টি যা মানুষ তার কাজকে সহজ করার জন্য তৈরি করেছে। যার ফলে বর্তমানে ৩ মিলিয়নেরও বেশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট ব্যবহার করা হয়।তাছাড়া প্রতিবছর প্রায় ৪ লক্ষ রোবট নতুন করে বাজারে প্রবেশ করছে।
ইন্সটিটিউট ফর এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায় যে রোবট ব্যবহারের ফলে জার্মানিতে ২০০৪-২০১৪ এই ১০ বছরে জনপ্রতি ০.৫ শতাংশ হারে জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য একটি রিপোর্টে দেখা গেছে যে ০.৮ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে রোবট। তাছাড়া ১৯৯৩-২০১৬ পর্যন্ত OECD এর দেশগুলোতে রোবট ব্যবহারের ফলে মাথাপিছু জিডিপি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেটি রোবট ব্যবহারের ভালো দিক হিসাবে বর্ণনা করা যায়
এছাড়া রোবট ব্যবহারের সব যে ভালো দিক বিষয়টা এমন না।একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ১০০০ জনের পারিশ্রমিক ০.৪২ হারে হ্রাস পেয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী অটোমেশন 2025 সালের মধ্যে 85 মিলিয়ন চাকরি কমিয়ে দেবে। অন্য একটি রিপোর্ট অনুযায়ী আমেরিকাতে ৩০ সালের মধ্যে রোবটের জন্য 73 মিলিয়ন চাকরি বাদ বাদ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা বর্তমান চাকরির প্রায় ৪৬% এর সমান।
তাই বলাই যায় যে রোবটের যেমন ভালোদিক রয়েছে তেমনি কিছু খারাপ দিকও রয়েছে।
ভবিষ্যতের জন্য রোবোটিক্স :
ভবিষ্যতের কোনো একটি সময় হয়তো দেখা যাবে যে আমরা খাটে শুয়ে বসে রোবটের মাধ্যমে নিজেদের দৈনন্দিন সকল কাজই করছি। কেননা দিন দিন রোবটের ব্যবহার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের কাজ সহজ করে দিতেই এই রোবটের ব্যবহার। তাছাড়া রোবটের মার্কেটও দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন ২০২৮ সাল নাগাদ যা ১০২.৪ বিলিয়ন ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে যা প্রায় ১৭.৬৪% বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া ক্যারিয়ার হিসাবেও আপনি যদি রোবট বিষয়টি বেছে নেন তবে সেটি আপনার জন্য খুবই ভালো একটি সিদ্ধান্ত হবে বলে আমরা উপরের তথ্যগুলো দেখলেই বুঝতে পারি।
আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।