মানুষের কথা বলার জন্য নিজস্ব একটি ভাষা আছে ,একে অপরের সাথে কথা আদান প্রদানের জন্য।ঠিক তেমনি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র গুলোর কমিউনিকেট করার জন্য নির্দিষ্ট ভাষা থাকে ।কম্পিউটারের এই ভাষাকেই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ বলে। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ,সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট,গেম ডেভেলপমেন্ট সবকিছুই আপনি প্রোগ্রামিং ভাষার মাধ্যমে করতে পারবেন।চলুন আজকের টপিকসে জেনে নেওয়া যাক এর প্রোগ্রামিং ভাষার জনপ্রিয়তা কিভাবে বাড়ছে-
প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ কি ?
কম্পিউটার ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো সমস্যা সমাধান করা।আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য দরকার হয় প্রোগ্রাম।প্রোগাম হলো ধারাবাহিক ভাবে সাজানো কিছু নির্দেশের সমষ্টি যা কম্পিউটারের কাজকে সহজ করে।সহজভাবে বললে কম্পিউটার ব্যবহার করে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য যে সব ভাষা ব্যবহার করে প্রোগ্রাম রচনা করা হয় তাকেই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা প্রোগ্রামিং ভাষা বলে।কম্পিউটারসহ বর্তমান বিশ্বের যত রকমের ডিজিটাল ডিভাইস রয়েছে তাদের ভাষাই হলো মূলত প্রোগ্রামিং ভাষা।প্রোগ্রামে ব্যবহৃত বর্ন,শব্দ,সংকেত ইত্যাদি নির্দিষ্ট গঠনে হয় প্রোগ্রামের ভাষা। যেমনঃc, c++,python,java,visual basic,fortran,oracle etc.
প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের স্তরঃ
১৯৪৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকশত ভাষা আবিষ্কৃত হয়েছে। এ সকল ভাষাকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়েছেঃ
মেশিন ভাষা ঃ ১৯৪৫ সালে প্রথম প্রজন্মের ভাষা হিসাবে মেশিন ভাষা আবিষ্কৃত হয়।মেশিন ভাষার বেস বা ভিত্তি হলো( 0,1)বাইনারি সংখ্যা।বিদ্যুতের হাই ভোল্টেজকে bit 1 এবং লো ভোল্টেজকে bit 0 নিয়ে কম্পিউটারকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য বাইনারি কোড ইউস করেছে।তবে এই ভাষা শুধু কম্পিউটারই বুঝতে পারে মানুষ নাহ অ্যাসেম্বলি ভাষাঃদ্বিতীয় প্রজন্ম বা সেকেন্ড জেনারেশন প্রোগ্রামিং ভাষা আসে ১৯৫০ সালে ।এখানে বাইনারি ডিজিট এর পরিবর্তে keywords ব্যবহার করা হয়।প্রতিটি বাইনারি সংখ্যার বিপরীতে একটি বিশেষ শব্দকে কমান্ড হিসাবে ব্যবহার করা হয়,এদেরকে নেমোনিক বলা হয়ে থাকে।
উঁচ্চস্তরের ভাষাঃ থার্ড জেনারেশন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৬০ সালে । বর্তমানে বিশ্বে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় ভাষা হলো উচ্চস্তরের ভাষা,কারন English keywords ও symbol ব্যবহার করার কারনে মানুষ খুব সহজেই এই ভাষা বুঝতে পারে ।যেমনঃC++, Java, PHP 4GL (Fourth Generation Language-1970):অতি উচ্চস্তর বা হাই লেভেল ভাষা কোনো সংকেত বা সাংকেতিক কোড নির্ভর নাহ।উচ্চ স্তরের ভাষা মানুষের ভাষার সাথে মিল রেখেই (English) তৈরি করা হয়েছে।যেমনঃBASIC, COBOL, FORTRAN, PASCAL, C++, JAVA, PROLOG 5G(Fifth Generation language -1980):সোর্স প্রোগ্রামকে অবজেক্ট প্রোগ্রামে পরিনত করার জন্য যে প্রোগ্রাম ব্যবহার করা তাই মূলত অনুবাদক প্রোগ্রাম বা 5g ভাষা(অ্যাসেম্বলি ভাষায় লিখিত প্রোগ্রামকে সোর্স প্রোগ্রাম ও মেশিন ভাষায় অনুবাদ করার প্রোগ্রামকে অবজেক্ট প্রোগ্রাম বলা হয়ে থাকে)।
প্রোগ্রামিং ভাষা কীভাবে শিখতে হয়?
প্রোগ্রামিং হলো বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ যুগের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কেননা প্রোগ্রামিং ছাড়া কোনো ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস চিন্তাই করা যায় না। কম্পিউটার বা যেকোনো ডিজিটাল ডিভাইস প্রোগ্রামিং দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আর তাই প্রযুক্তি যতটা উন্নতি হচ্ছে তার সাথে সাথে বাড়ছে প্রোগ্রামিংয়ের চাহিদাও তাই প্রোগ্রামিং শিখতে পারলে আপনি অনেক ভালো কিছুই করতে পারবেন বলে ধারণা করা যায়। প্রোগ্রামিং শিখতে হলে প্রথমেই আপনাকে একটি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে হবে কেননা অনেক ধরনের প্রোগ্রামিং ভাষা রয়েছে যেমন : Python, Java, C, C++, C# , JavaScript ইত্যাদি।
আপনি শুরুতেই যদি C বা C++ শিখেন তবে সেটি আপনার জন্য বেশি ভালো হতে পারে কেননা কম্পিউটারের অনেক সফটওয়্যার এবং গেম এই ভাষাগুলো ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। তারপর আপনি java অথবা JavaScript শিখতে পারেন কেননা এটিও বর্তমানে অনেক বেশি জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা মোবাইল এপ্স তৈরিতে java ব্যবহার করা হয় । আপনি বিভিন্ন ধরনের অনলাইন অফলাইন কোর্স থেকে প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে পারেন এবং এটি শিখে আপনি ভালো একজন ওয়েব ডেভেলপার হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন। কেননা ডিজিটাল ডিভাইস আর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আর সেই সকল ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের জন্য দরকার পড়ছে দক্ষ সব ওয়েব ডেভেলপের। তাই বসে না থেকে আজই শুরু করে দিন আপনার ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ক্যারিয়ারের জার্নি।
প্রোগ্রামিং শিখে কীভাবে টাকা আয় করা যায় ?
ফ্রিল্যান্সিং করে আয়ের সুযোগ
বর্তমান যুগে অনেক তরুণ তরুণী ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন করছে আর এই ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনার অবশ্যই কোনো একটি ডিজিটাল স্কিল থাকতে হবে আর সেই স্কিলটি কাজে লাগিয়ে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে লক্ষাদিক টাকার উপরে ইনকাম করতে পারেন। আর এই ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা প্রোগ্রামিং শেখা । ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য যেসব স্কিল এর দরকার হয় তাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কিল প্রোগ্রামিং।প্রথমত ফেসবুক বা লিংকডইন এর মত প্ল্যাটফর্মে নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে কাজ পেতে পারেন।এছাড়া আপনি আপওয়ার্ক ,ফাইবার মার্কেটপ্লেস গুলোতে প্রোগ্রামিং সংক্রান্ত অনেক ধরনের চাকরির সুযোগ রয়েছে।আবার আপনি চাইলে ফাইবারে গিগ আপলোড দিয়ে কাজ করতে পারেন।
ওয়েব ডেভেলপার হয়ে আয়ের সুযোগ
আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে টাকা আয় করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো শিখতে হবে আপনি যত বেশি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখবেন প্রোগ্রামিং ক্যারিয়ার হিসাবে নিতে আপনার তত বেশি সুবিধা হবে। তাছাড়া আপনি ধরুন শুধুমাত্র Python শিখেও আপনি ওয়ার্ডপ্রেস এ ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট করে অনেক টাকা আয় করতে পারেন। কেননা অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোর মধ্যে Python শেখাটা তুলনামূলক সহজ এর তাই এটি শিখেও আপনি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শুরু করে দিতে পারেন।
আপনি ক্লায়েন্টকে একটি ওয়েবসাইট সুন্দরভাবে তৈরি করে সেটি অপ্টিমাইজ করে দিয়ে আপনি কয়েক হাজার ডলারও ইনকাম করতে পারেন।এই থেকেই আমরা বুঝতে পারছি যে একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে দিয়ে কি পরিমাণে টাকা ইনকাম করা সম্ভব। এর তাই আপনি যদি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখে একজন ভালো ওয়েব ডেভেলপার হতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে আপনার সুন্দর একটি ক্যারিয়ার সামনে রয়েছে। তাই আপনার যদি প্রোগ্রামিং নিয়ে আগ্রহ থাকে তবে আজ থেকেই শেখা শুরু করে দিন এবং হয়ে উঠুন একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার।
ব্লগিং
প্রোগ্রামিং করার পাশাপাশি যদি আপনার লেখালেখির শখ থাকে ,তাহলে আপনি চাইলেই একটি ওয়েব সাইট বিল্ড করে ,সেখানে আপনি আপনার পছন্দের নিশ বেছে নিয়ে কন্টেণ্ট পাবলিশ করতে পারেন।আপনি চাইলে আপনার প্রোগ্রামিং জার্নি নিয়েও লিখতে পারেন ,অন্যকে শিখতে আগ্রহী করে তুলতে পারেন।এর থেকে আপনার একটি পরোক্ষ ভাবে ইনকাম হয়ে যাবে । তবে ব্লগ মনিটাইজ করা একটু সময় সাপেক্ষ বিষয় ।ওয়েব সাইট র্যাঙ্ক করা,ট্রাফিক আসা,এটার জন্য সময় দরকার পরে।তবে এখান থেকে আপনি প্যাসিভ ইঙ্কাম করতে পারবেন।
আইটি সেক্টর
আইটি সেক্টরটি অনেক বৃহৎ ও বিস্তৃত।পুরা বিশ্ব এখন এই সেক্টরের উপর কাজ করছে ।কাজকে সহজ করে তোলার জন্য এর ভূমিকা অপরিসীম।টেক জায়েন্ট কোম্পানি গুলোতে একজন প্রোগ্রামের অনেক মূল্যায়ন করা হয়।উচ্চ বেতনের সুবিধা দিয়ে থাকে।এছাড়া দেশের বিভিন্ন আইটি কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ রয়েছে ।উদাহরস্বরূপ ঃ গুগলে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর বেতন শুরু করা হয় $118000 ডলার থেকে ।আপনি যদি নিজেকে একজন দক্ষ প্রোগ্রামার হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন ,তাহলে আপনার চাহিদা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকবে।
প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এর ভবিষ্যৎ
একটি প্রবাদ প্রচলন আছে যে " প্রোগ্রামিং ভবিষ্যৎ"। এটি কেন বলা হয় সেটি আমরা জানবো। বর্তমান বিশ্ব এখন প্রযুক্তি নির্ভর আর প্রযুক্তির অন্যতম বড় একটি আবিষ্কার হলো কম্পিউটার যেটি আমাদের জীবনযাত্রাকে আরো অনক বেশি সহজ করে দিয়েছে। তাছাড়াও আরো অনেক ডিজিটাল ডিভাইস রয়েছে যেমন মোবাইল বা স্মার্টফোন, ক্যালকুলেটর, স্মার্টওয়াচ , রোবট, Ai আরো অসংখ্য ডিজিটাল ডিভাইস রয়েছে যা আমাদের নিত্যদিনের সকল কাজ আরো বেশি সহজ করে দিয়েছে।
আর এই ডিজিটাল ডিভাইসের ভাষা হচ্ছে প্রোগ্রামিং। আর তাই যেহেতু ডিজিটাল ডিভাইস এর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই সংখ্যাটা কখনো কমারমতো নয় তাই এই সমস্ত ডিজিটাল ডিভাইসকে নির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রোগ্রামার দরকার হবে আর তাই প্রোগ্রামিং অদূর ভবিষ্যতে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।২০২৩ সালে,সুযোগ ডেস্ক অনুসারে সমস্ত শিল্পে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়্যারদের চাহিদা প্রায় ১৭% বেড়েছে ,দিন দিন এর চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে ধারনা করা হচ্ছে।শুধুমাত্র আমেরিকাতেই (২০২৩-২০২৮) সালের মধ্যে প্রোগ্রামিং মার্কেট ৪.১৬% বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৮ সালে যার মার্কেট ভ্যালু ৪১৪.৭০ বিলিয়ন ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।তো বোঝাই যাচ্ছে এর বাজার দর কতটা বাড়বে।
আমরা পড়াশোনা করি জানার জন্য একথা ঠিক ,কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এমন হয়ে গেছে চাকরির জন্য পড়াশোনা করছি ।এই জীবদশা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য আমাদের চাই আলাদা দক্ষতা ,তার জন্য আমরা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ,ডিজাইন শিখতে পারি ।আপনি যদি একজন ভাল প্রোগ্রামার হন তাহলে চাকরি আপনাকে খুজতে হবে নাহ ,চাকরি আপানাকে খুজে নিবে । তবে এতটাই সহজ নাহ প্রোগ্রামিং ,আপনাকে এর পিছনে সময় দিতে হবে।সোজা কথায় লেগে থাকতে হবে।
আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।