একবিংশ শতাব্দীতে এসে একটা শব্দ আমরা সবাই কম বেশি শুনে থাকি ইনফলুয়েন্সার। ইনফ্লুয়েন্সের হলো এমন একজন যে অন্য মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে তাদের পরিবর্তন করে দেয় অর্থাৎ যে ব্যক্তি অন্যদেরকে দিক নির্দেশনা বা কোনো ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ করে থাকে তাকে ইনফ্লুয়েন্সার বলে।বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ,ইউটিউব প্ল্যাটফর্ম এর জন্য ইনফলুয়েন্সার দের একটা বৃহৎ অংশ তাদের প্রতিভার জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ।এমনকি এখন তারা তাদের দক্ষতার মাধ্যমে প্রোডাক্ট,বিজনেস ,সফটওয়্যার সহ বিভিন্ন জিনিসের মাধ্যমে রিভিউ দিয়ে থাকে এসব এর মূল কাজ হলো মার্কেটিং করা।একজন ইনফ্লুয়েন্সার খুব সহজে তার অডিয়েন্সকে প্রভাবিত করতে পারে তার ভিডিও এর মাধ্যমে ।এর মাধ্যমে একটা কোম্পানির ব্রান্ড, ভ্যালু বেড়ে যায়।আজকে আমরা জানবো ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কি ,কীভাবে এর মাধ্যমে মার্কেটিং করে,এদের ভবিষ্যৎ চাহিদা কেমন থাকবে।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কী?
ডিজিটাল মার্কেটিং এর জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হলো ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং । অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয় ব্যক্তি যখন কোনো কোম্পানির হয়ে তাদের পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে ,তখন এই মার্কেটিং প্রক্রিয়াকে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বলে।
Influencer marketing এর একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে,আমাদের দেশের দেশ সেরা নেটওয়ার্ক গ্রামীনফোনের তাদের বর্তমান ব্রান্ড আম্বাসিডর হলো বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান ।তার সোশ্যাল মিডিয়াতে মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোয়ার্স রয়েছে তাদের মাধ্যমে গ্রামীণ ফোনের বিভিন্ন সার্ভিসের পরিচিতি বৃদ্ধি পায়।এছাড়া বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফুড ব্লগার Rafsan The Chotobhai বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট এর রিভিউ করে থাকে ,এর জন্য রেস্টুরেন্ট এর মার্কেটিং বৃদ্ধি পায় ও তাদের সেল বাড়ে ।
ব্রান্ড প্রমোশনের জন্য এই মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ কেনো
বর্তমানে ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপের এই মার্কেটিং এর অসংখ্য সুবিধা ও কার্যকারিতার জন্য ব্রান্ড প্রচারণার অন্যতম একটি কৌশল হয়ে উঠছে ।আমাদের লাইফ স্টাইলে ইনফ্লুয়েন্সারা বিশেষ প্রভাব ফেলে। আমাদের কোনো কিছুর দরকার হলে আমরা এখন ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ,ইউটিউব,গুগল এর মতো জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন এগুলোতে ।এই সাইটগুলোতে ইনফ্লুয়েন্সাররা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিডিও আপলোড দিয়ে থাকে বা ব্লগ দেয়।পজিটিভ রিভিউ নিয়ে আমরা কোনো কিছু কেনার চিন্তা করে থাকি।আমরা এখন আমাদের চলা-ফেরা,খাওয়া -দাওয়া ,ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস,ট্রাভেল ইত্যাদি নানা বিষয়ে ইনফ্লুয়েন্সারদের ফলো করছি।একবার ভেবে দেখুন আমরা একজন প্রভাবক (influencer) দ্বারা কতটা প্রভাবিত হয়ে থাকি।
এই মার্কেটিং কেন করবো এবং এর গুরুত্ব কী?
আমাদের মাথায় চিন্তা আসতেই পারে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কেন করবো ? অথবা এটা করে আমাদের কি কোনো লাভ আছে।যদি এই প্রশ্ন আপনার মনের মধ্যে আসে তাহলে অবলীলায় বলা যায় হা অবশ্যই লাভ আছে।কারণ আমরা খুব ভালো করেই জানি প্রচারেই প্রসার তাই প্রচার যত আধুনিক এবং বেশি হবে ঠিক ততটাই বেশি মানুষ আকৃষ্ট হব।তাই সেক্ষেত্রে এই মার্কেটিং এর জুড়ি নেই।যেহেতু একজন মানুষ প্রাক্টিক্যালি এই মার্কেটিং গুলো করে তাই এই মার্কেটিং গুলো অনেকটাই বাস্তব সম্মত মনে হয় যা মানুষের চিন্তায় খুব সহজেই প্রভাব ফেলে।আবার যে মার্কেটিংটি করছে সেযদি কোনো জনপ্রিয় ব্যক্তি হয় তাহলে তো কথাই নেই।
যেমন ধরুন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান এর কোথায় ধরা যাক,বর্তমান সময়ে যে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি এতে কোনো সন্দেহ নেই,যার কারণে বাংলাদেশের অনেক নামি দামি কোম্পানি তাদের ব্র্যান্ড এম্বাসিডর হিসাবে তাকে হায়ার করেছেন যেমন ধরেন yamaha ,Grameen phone ,Daraz ,Za n Zee ,Banglalink সহ আরো অনেক কোম্পানি এবং প্রোডাক্ট এর।এখন বর্তমানে এই কোম্পানির আগের সেল এবং তাকে ব্র্যান্ড এম্বাসিডর হিসাবে হায়ার করার পরের সেল গুলো বিবেচনা করলেই আপনার কাছে ক্লিয়ার হয়ে যাবে একটি কোম্পানি এবং একটি প্রোডাক্ট এর সেল বাড়ানোর ক্ষেত্রে একজন ফেমাস ব্যক্তি ইনফ্লুয়েন্সের হিসাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।আমি যদি বুঝানোর জন্য আরেকটু সোজা ভাবে বলি তাহলে,এখন যেকোনো একটি নতুন কোম্পানি বা প্রোডাক্ট এর জন্য যদি সাকিব আল হাসানকে অথবা অন্য কোনো জনপ্রিয় ব্যক্তি দিয়ে মার্কেটিং করা হয় তাহলে সেই কোম্পানি বা প্রোডাক্ট এর গ্রোআপ খুব সহজেই হয়ে যাবে।
সফল ইনফলুয়েন্সার হওয়ার উপায়
আপনি যদি একজন সফল ইনফ্লুয়েন্সার হতে চান তাহলে আপনাকে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এবং ইউটুবেও আপনার ফেমাস হতে হবে অর্থাৎ প্রচুর ফ্যান ফলোয়ার্স বাড়াতে হবে।যদিও এটি একদিনে সম্ভব না।খুব ধৈর্য সহকারে আগাতে হবে।কিন্তু ফ্যান ফলোয়ার্স বাড়ানোর জন্য অশ্লীল কন্টেন্ট এবং হারাম বিষয় গুলো নিয়ে কোনো ভাবেই কাজ করা যাবে না।সঠিক উপায়ে একজন সফল ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার জন্য নিচে কিছু টিপস দেই-
জনপ্রিয় সকল সোসিয়াল মিডিয়া গুলোতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা
বর্তমানে ইন্টারনেটে অনেকগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে facebook,instagram,twiter,whatsapp,ইত্যাদি সহ আরো অনেক জনপ্রিয় সোসিয়াল মিডিয়া সাইট রয়েছে।আপনাকে একজন সফল ইনফ্লুয়েন্সার হতে হলে সবার প্রথমেই এই সকল প্লাটফর্ম গুলোতে আপনার অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ফ্যান ফলোয়ার্স বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
এনগেজিং কন্টেন্ট তৈরি করে আপলোড করা
সোসিয়াল মিডিয়া গুলোতে শুধু অ্যাকাউন্ট খোলার পরেই কাজ শেষ অটোমেটিকলি আপনার ফ্যান ফলোয়ার্স বেড়ে যাবে এরকম ভাবাটা নিতান্তই বোকামি।কারণ মানুষ আপনাকে ফলো করে এই ধরনের কিছু পজেটিভ ইউনিক কন্টেন্ট আপনাকে আপলোড করতে হবে।সেটা ছবি,ভিডিও,টেক্সট অনেক কিছুই হতে পারে।যাতে করে মানুষ আপনাকে সেই কন্টেন্ট এর জন্য পজিটিভ কমেন্ট,লাইক এবং শেয়ার করে।এর মাধ্যমে আপনি মানুষের খুব সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন।
ফলোয়ারদের সাথে সব সময় কোমোনিকেশন রাখা
সোসিয়াল মিডিয়ায় কোনো কন্টেন্ট দেওয়ার পরে অবশ্যই সেখানে বিভিন্ন ধরনের রিঅ্যাকশন,কমেন্ট অথবা লাইক বা ডিসলাইক আসবে।আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য সহকারে সেগুলোর যথাযথ রিপ্লাই দিতে হবে।এখানে একটা জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবে খেয়াল রাখবেন,সেটা হলো আপনার কন্টেন্ট এ অনেক ধরনের নেগেটিভ মন্তব্য আসতে পারে কিন্তু আপনাকে অবশ্যই মাথা ঠান্ডা রেখে তার পজিটিভ উত্তর দিতে হবে।তাহলেই মানুষের মাঝে আপনার জনপ্রিয়তা বাড়বে।
অন্য ইনফ্লুয়েন্সের দের সাথেও সম্পর্ক রাখা
আপনি একজন ইনফ্লুয়েন্সের হতে চাইলে আপনাকে অনন্যাও ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথেও সব সময় সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে তাহলে আপনি তাদের থেকেও নতুন নতুন আইডিয়া অথবা সাজেশন পাবেন এবং এর সাথে আপনার ফ্যান ফলোয়ার ও বাড়বে।
হ্যাশট্যাগ এর ব্যবহার সঠিক ভাবে করা
হ্যাশট্যাগ সোসিয়াল প্লাটফর্ম এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কারণ এটি পোস্ট এর ভিজিবিলিটি বাড়াতে খুবই সাহায্য করে।তাই হ্যাশট্যাগ সম্বদ্ধে আপনার ধারণা না থাকলেও আপনার এই বিষয়ে অবশ্যই আগে জ্ঞান অর্জন করে নিবেন।কারণ প্রতিটি কন্টেন্ট এর নিচে সঠিক ভাবে হ্যাশট্যাগ প্রয়োগ করা আপনার রিচ বাড়াতে সাহায্য করবে।
সোশিয়াল মিডিয়া গুলোতে অ্যাকটিভ থাকা
ইনফ্লুয়েন্সের মার্কেটিং হওয়ার জন্য এটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।ভালোমানের একজন ইনফ্লুয়েন্সের হতে হলে আপনাকে সর্বদাই সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে অ্যাক্টিভ থাকতে হবে।আপনার ফ্যান ফলোয়ার ধরে রাখার জন্য সময় উপযোগী ট্রেন্ড এর সাথে মিল রেখে কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে।সোজা কথা অনলাইনে আপনাকে দীর্ঘসময় ব্যয় করতে হবে।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ
আপনার যদি ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে সাধারণ জ্ঞান থাকে তাহলে ইনফ্লুয়েন্সের মার্কেটিং এর গুরুত্ব অবশ্যই বুজবেন।বর্তমানে ইনফ্লুয়েন্সের নিয়ে অনেক চর্চা হচ্ছে।কারণ ইনফ্লুয়েন্সের মার্কেটিং বাস্তব সম্মত হওয়ায় একজন ইনফ্লুয়েন্সের এর মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান খুব সহজেই তার গ্রাহক এর কাছে পৌঁছাতে পারে।স্যোশাল মিডিয়ার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে এই মার্কেটিং করানো হয় বলে এর মাধ্যমে যেকোনো প্রতিষ্ঠান তাদের কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকদের চিন্তায় খুব সহজেই ঢুকতে পারে।দিন দিন এর চাহিদা বাড়ায় এর ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো সন্দিহান নেই।কারণ দিন দিন এর চাহিদা ব্যাপক হরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটার হিসাবে কত টাকা আয় করা যায়
দেখুন যেহেতু ইনফ্লুয়েন্সের মার্কেটিং নির্ভর করে ফ্যান ফলোয়ার এর উপরে তাই এর টাকা আয়ের বিষয়টিও নির্ভর করে এর উপরে।এতে কোনো ধরা বাধা নিয়ম নেই।ধরুন,বৈশ্বিক স্তরে হটসুইট এর মতে আপনার যদি ১,০০০-১০,০০০ ফলোয়ার থাকে তাহলে আপনি একজন ইনফ্লুয়েন্সের হিসাবে প্রতি পোস্ট এর জন্য ১৭০ ডলার উপার্জন করতে পারবেন।আবার এই ফ্যান ফলোয়ার যদি ১০,০০০ - ৫০,০০০ হয় তাহলে একজন ইনফ্লুয়েন্সের হিসাবে আপনার প্রতি পোস্ট যায় হবে ২৬৬ ডলার এর মতো।এটা তো বললাম সোসিয়াল মিডিয়া সেক্টর এর কথা কিন্তু এর সাথে যদি আপনি কোনো কোম্পানির অথবা প্রোডাক্ট এর ব্র্যান্ড এম্বাসিডর হয়ে যেতে পারেন তাহলে তো কোথায় নেই।তাই একজন ভালো ইনফ্লুয়েন্সের হলে আপনি ভালো টাকাই উপার্জন করতে পারবেন তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
এতক্ষণ ইনফ্লুয়েন্সের মার্কেটিং নিয়ে অনেক আলোচনায় করলাম।ইনফ্লুয়েন্সের মার্কেটিং এর মোটামুটি সব কিছুই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।মূলকথা হচ্ছে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের মার্কেটিং সেক্টর গুলোও আমূল পরিবর্তন হচ্ছে তার মধ্যে ইনফ্লুয়েন্সের মার্কেটিং অন্যতম।কারণ এই সেক্টরটি বাস্তব পূর্ণ হওয়ায় এটি মানুষের মনে খুব সহজেই প্রভাব ফেলে এবং এর দ্বারা মানুষ আনন্দের দ্বারা আকর্ষিত হয়।তাই যদি আপনি একজন ভালোমানের ইনফ্লুয়েন্সের হতে চান তাহলে,ধৈর্য ধারণ করে লক্ষ্যে স্থির থেকে কঠোর পরিশ্রম করুন।তাহলে আশা করা যায় আপনি একজন ভালো মানের ইনফ্লুয়েন্সের হতে পারবেন।এবং যদি মাথায় চিন্তা আসে,আমি কি ভালো ইনফ্লুয়েন্সের হতে পারবো !!আমি কি এর মাধ্যমে টাকা উপার্জন করতে পারবো !!তাহলে আপনাকে বলবো,আপনি বিসমিল্লাহ বলে শুরু করেন,ইনশাআল্লাহ - সফলতা আসবেই।
আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।