সিকিউরিটি বলতে আমরা নিরাপত্তার কথা বুঝি। আর সাইবার সিকিউরিটি হলো ডিজিটাল দুনিয়ার জন্য নিরাপত্তা।যা আমাদের ব্যবহারকৃত ডিজিটাল দুনিয়া যেমন : মোবাইল, কম্পিউটার এর মধ্যে থাকা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সে প্রক্রিয়াটি হলো সাইবার সিকিউরিটি। বর্তমান প্রযুক্তির এই দুনিয়ায় আমরা কেউ নিরাপদ না কেননা আমরা হয়তো ডিজিটাল ডিভাইসগুলো ব্যবহার করতে জানি কিন্তু ডিজিটাল এই দুনিয়ায় নিজেদের কীভাবে নিরাপদ রাখতে হয় তা কিন্তু জানি না।আর তাই ভার্চুয়াল দুনিয়ার হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিজেদের নিরাপদ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সাইবার সিকিউরিটি কি ?
সাইবার নিরাপত্তাকে অনেক সময় সংক্ষেপে "সাইবারসেক" বলা হয়। কম্পিউটার সিস্টেম ,নেটওয়ার্ক , ডিভাইসের বিভিন্ন ডেটা চুরি , ক্ষতি বা অন্য কেউ যাতে এসবের এক্সেস নিতে না পারে সেজন্য ডিজিটাল ডিভাইসগুলোকে এই ধরনের আশঙ্কা থেকে বাঁচাতে যে ধরনের নিরাপত্তা দিতে হয় তাই হলো সাইবার নিরাপত্তা ।
এর মাধ্যমে আমাদের নিজেদের যত তথ্য ডিজিটাল ডিভাইসগুলোতে থাকে তা সুরক্ষিত এবং গোপনও রাখতে পারি। যখন আমরা ভার্চুয়াল জগতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারি তখন আমরা মানসিকভাবে স্বস্তিতে থাকতে পারি কিন্তু যদি আমাদের তথ্যগুলো সুরক্ষিত না থাকে তবে আমাদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করে কেননা তখন আমরা নিজেদের সুরক্ষিত মনে করি না। তাই ডিজিটাল দুনিয়াতে সাইবার নিরাপত্তা খুবই দরকারি এবং জরুরি একটি বিষয় নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে।
বর্তমানে সাইবার সিকিউরিটির মার্কেট ভ্যালু ১৭২.৩২ বিলিয়ন ডলার রয়েছে যেটি ২০২২ সালে ছিল ১৫৩.৬৫ বিলিয়ন ডলার। যা ৩০ সালের সময়কাল পর্যন্ত আরো ১৩.৮% বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুতরাং কোনোভাবেই সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বরং তা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং একটা সময় বিশ্বের প্রতিটি মানুষ সাইবার নিরাপত্তা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস তা বুঝতে পারবে।
সাইবার সিকিউরিটির যাত্রা :
১৯৭০ সালে সর্বপ্রথম সাইবার নিরাপত্তা বিষয়টি সবার সামনে আসে। যেটি ছিল সাইবার নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। ১৯৮৩ সালে ইন্টারনেট চালুর পর আমরা প্রথম সত্যিকারের ম্যালওয়্যার দেখতে পাই যেটি "Creeper virus" নামে পরিচিত ছিল। এভাবেই শুরু হয় সাইবার নিরাপত্তার যাত্রা। যা সময়ের সাথে সাথে প্রতিদিনই আপডেট হচ্ছে তার সাথে ম্যালওয়্যার ভাইরাসগুলোও এবং হ্যাকারদের হ্যাকিং কৌশল ও দিনে দিনে আরো আপডেট হচ্ছে তাই আমাদের সকলের ভার্চুয়াল নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।
সাইবার সিকিউরিটি কেন দরকার :
আজকের এই ডিজিটাল যুগে সাইবার নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বিশেষ করে আমরা যখন জানি যে ভার্চুয়াল দুনিয়াতে আমরা কেউই নিরাপদ না তাই এই নিরাপত্তাজনিত দুশ্চিন্তা দূর করতে সাইবার নিরাপত্তা আমাদের জন্য তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
ডেটা সুরক্ষা : সাইবার নিরাপত্তা অননুমোদিত অ্যাক্সেস চুরি বা পরিবর্তন থেকে আমাদের সংবেদনশীল ডেটা গুলোকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে। আর তার মধ্যে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য, আর্থিক তথ্য এই সকল অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল তথ্য থাকে। সাইবার নিরাপত্তা আমাদের সেসব তথ্যকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
গোপনীয়তা বজায় রাখা : অনলাইনে আমাদের অনেক ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য থাকে যা ভার্চুয়াল নিরাপত্তার মাধ্যমে অনলাইন দুনিয়া থেকে গোপন থাকে।
ব্যবসার ধারাবাহিকতা : সাইবার অ্যাটাক ব্যবসার যে ধারাবাহিকতা থাকে তা নষ্ট করে ব্যবসার ক্ষতি করতে পারে। আর তাই সাইবার নিরাপত্তা আমাদের ব্যবসাকে এই সমস্ত ক্ষতির হাত থাকে রক্ষা করতে পারে।
ডিজিটাল অ্যাসেট রক্ষা: বিভিন্ন ধরনের গবেষণার তথ্য কোম্পানিগুলো তাদের ওয়েবসাইট এ রাখে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার , কোর্স এই ধরনের ডিজিটাল সম্পত্তিগুলো সাইবার নিরাপত্তার মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে।
জাতীয় নিরাপত্তা : সাইবার আক্রমণ একটি দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ কেননা সরকারি বিভিন্ন ধরনের সংবেদনশীল তথ্য সার্ভারে থাকে তাছাড়া অবকাঠামো প্রতিরক্ষা জনিত বিভিন্ন তথ্যও তারা নিজস্ব সার্ভারে আপলোড করে রাখে এই ধরনের সার্ভার যদি সাইবার আক্রমণের মুখে পরে তবে তা দেশ ও জাতির জন্য অনেক বড় হুমকিস্বরূপ তাই একটি দেশের নিরাপত্তার জন্য সাইবার নিরাপত্তা অনেক বেশি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ।
র্যানসমওয়্যার এবং ব্ল্যাকমেইল প্রতিরোধ : সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির উপর র্যানসমওয়্যার অ্যাটাক চালিয়ে তাদের ডেটা এনক্রিপ্ট করে তারপর সে ডেটাগুলো মুক্ত করে দেয়ার জন্য হ্যাকাররা বিভিন্ন পরিমাণের মুক্তিপণ দাবি করে যেটি খুবই ভয়ংকর একটি ঘটনা যাদের সাথে এমন ঘটনা হয়েছে কেবল তারাই বিষয়টির ভয়াবহতা বুঝতে পারে। তাই সাইবার নিরাপত্তা এই ধরনের সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।
বৈশ্বিক সংযুক্ততা : বিশ্ব ডিজিটালভাবে আন্তঃসংযুক্ত যার ফলে সাইবার আক্রমণ পুরো বিশ্বের জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। সাইবার নিরাপত্তার ফলে সাইবার আক্রমণ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
তাই বলা যায় সাইবার নিরাপত্তা আমাদের এই ডিজিটালি সংযুক্ত বিশ্বের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় এবং অনেক বেশি দরকারি একটি বিষয় যা আমাদের ভার্চুয়াল জগতের উৎপেতে থাকা আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
সাইবার নিরাপত্তা এক্সপার্ট হওয়ার গুরুত্ব :
একজন সাইবার নিরাপত্তা এক্সপার্ট হওয়া ব্যক্তির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি দেশের সরকার , প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ।এখন আমরা এর কিছু কারণ সম্পর্কে জানবো।
ক্রমবর্ধমান হুমকি থেকে বাঁচতে : বর্তমানে সাইবার হামলা দিন দিন অনেক বেশি বাড়ছে যার ফলে আপনি যদি সাইবার অপরাধীদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে চান তবে নিজেকে একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তুলুন।
ডেটার সুরক্ষা : একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জানেন কীভাবে তার ব্যক্তিগত ডেটা , আর্থিক বিভিন্ন তথ্য , বিভিন্ন ডিজিটাল সম্পদ সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হয়।
গোপনীয়তা জন্য কাজ করা : ডিজিটাল দুনিয়ায় গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে যার ফলে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ব্যক্তির তথ্য যাতে নিরাপদে থাকে সেজন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ব্যবসার ধারাবাহিকতা: বর্তমানে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল সিস্টেম এবং ডেটার উপর অনেক বেশি নির্ভর করে থাকে। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের ডেটাগুলো সংরক্ষণ করে ব্যবসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা : সাইবার আক্রমণের ফলে চুরি, বা বিভিন্ন জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক ক্ষতি হয় সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এই ধরনের ক্ষতি থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলোকে রক্ষা : পাওয়ার গ্রিড, স্বাস্থ্যসেবা খাত এবং পরিবহণ সেবা খাত এই ধরনের খাতগুলো সাইবার আক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের খাত গুলোকে সাইবার হামলার হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে।
ক্যারিয়ার গড়ে তোলা : বর্তমান যুগ ডিজিটাল হওয়াতে ক্রমাগতই বাড়ছে সাইবার হামলার ঝুঁকি আর তাই তার সাথে সাথে বাড়ছে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের চাহিদাও। তাই আপনি যদি একজন সাইবার নিরাপত্তা এক্সপার্ট হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে চান তবে সেটি খুবই ভালো একটি সিদ্ধান্ত। আমেরিকাতে বর্তমানে একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বছরে গড়ে ১১৫৩৭৭ ডলারের উপরে ইনকাম করে থাকে। বাংলাদেশেও একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মাসে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার উপরে ইনকাম করে থাকে এ ক্ষেত্রে কাজের ধরণ অভিজ্ঞতা অনেক কিছু নির্ভর করে।
তবে একজন সাইবার নিরাপত্তা কর্মী হয়ে আপনি যে খুবই ভালো পরিমাণে ইনকাম করতে পারবেন এবং নিজেকে ও নিজের সমাজকে সাইবার জগতের অজানা সব বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবেন তা বলাই যায়। তাছাড়া এই সম্ভাবনাময় বাজার দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে ২০২৩ সালে এই ইন্ডাস্ট্রির মার্কেট সাইজ ২০১.৩৩ বিলিয়ন ডলার যা ৩০ সাল নাগাদ ১৩.৮% হরে বৃদ্ধি পেয়ে ৪২৪.৯৭ বিলিয়ন ডলার হবে তাই এই সেক্টরে যদি আপনি নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান তবে সেটি আপনার জন্য খুবই ভালো একটি পেশা হতে পারে।
ভবিষ্যতে সাইবার নিরাপত্তা কীভাবে আমাদের রক্ষা করবে :
সাইবার নিরাপত্তা বর্তমানে যতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ভবিষ্যতে তার থেকেও অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে কেননা বর্তমানে আমার কিন্তু সব ক্ষেত্রেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করি না। কিন্তু ভবিষ্যতে দেখা যাবে যে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার হচ্ছে তাই তখন প্রত্যেকটি ডিভাইসের ডাটা সুরক্ষিত রাখতে হবে। তাই বর্তমানে সাইবার নিরাপত্তা যতটা গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যতে তার থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে সেটি বুঝতে অনেক বেশি গবেষণার দরকার পরে না।
আর তাই আমরা নিজেদের ভার্চুয়াল জগৎ থাকে নিরাপদে রাখতে সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্ক জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দরকারি।
আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।