বর্তমানে ডিজিটাল বিশ্বে সবকিছুই অনলাইন ভিত্তিক। কোন ব্রান্ড প্রচার প্রচারনার কাজে এখন অনলাইন মার্কেটিং কে গুরুত্ব দোওয়া হয়।ডিজিটাল মার্কেটিং এর জনপ্রিয় একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এফিলিয়েট মার্কেটিং। আপনি যদি অনলাইনে ইনকাম করতে আগ্রহী বা প্যাসিভ ইনকাম করতে চান তাহলে আপনার জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম হবে affiliate marketing । এটি কিভাবে করে ,এর কাজ কি ও ইনকাম করার সঠিক উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক-
এফিলিয়েট মার্কেটিং কী ?
এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি উপাদান বা অংশ।কোম্পানি বা খুচড়া বিক্রেতা তার পন্যর পরিষেবা বা ব্রান্ড এর প্রচার এবং বিক্রয় এর জন্য ছোটো বড় বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটারদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে থাকে ।যেমন , কোম্পানির সাথে জড়িত বিভিন্ন website ,blog,social media page , Youtube চ্যানেল ইত্যাদির মাধ্যমে করা যায়।
যখন কোন কোম্পানি বা ব্যক্তি তাদের ব্যবসায় বৃদ্ধির জন্য এফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু করে এবং মার্কেট প্লেসে তাদের প্রডাক্ট প্রচার করার জন্য বিভিন্ন Bloggers বা Youtube দের ব্যবহার করে এবংবিনিময়ে তাদেরকে একটা কমিশন প্রদান করে এটাই হলো affiliate marketing.
এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবেন?
এফিলিয়েট প্রোগ্রাম শুরু করার জন্য অবশ্যই একটা অনলাইন প্লাটফর্ম থাকতে হবে ।তা হতে পারে আপনার ব্লগ ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ তবে আপনার source বা platfrom এ প্রচুর পরিমানে ফলোয়ার, ভিজিটর বা সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে। কারন, প্রোডাক্টের মার্কেটিং করার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো অডিয়েন্স যাদের কাছে আপনি প্রোডাক্ট শেয়ার বা মার্কেটিং করবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা
একজন মার্কেটার মার্কেটিং করে সাধারানত ইনকাম এর জন্য ।এই মার্কেটপ্লেসে অনেক সুজোগ রয়েছে আপনি যদি ঠিক ভাবে এফিলিয়েট স্কিল অর্জন করতে পারেন।এটা এতোটাও সহজ না যে কেউ চাইলেই এটা করতে পারবে,হাজার হাজার মার্কেটাররা আছে যারা সফল হয়নি।অনেক ট্রিকস শিখতে পারবেন আপনি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম থেকে ।
সহজে শুরু করা যায়
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করা সহজ ।আপনি কোন এরিয়াতে কাজ করবেন এটা আগে ঠিক করে নিতে হবে,আপনার এরিয়ার অডিয়েন্স এর কোন প্রোডাক্ট এর চাহিদা বেশি এবং আপনার এই বিষয়ে জ্ঞান ও ইন্টারেস্ট থাকতে হবে।এরপরে আপনি কোন মিডিয়াতে এফিলিয়েট করবেন তা সিলেক্ট করে নিতে হবে।যেমনঃ ইউটিউব,ফেসবুক পেইজ বা এফিলিয়েট ওয়েভ সাইট।
Affiliate marketing খুব কম খরচে শুরু করা যায়।আপনি চাইলে নিজেই প্রডাক্ট এর ভিডিও করে ইন্সটাগ্রাম বা ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড দিয়ে অ্যাফিলিয়েট করতে পারেন।এছাড়া আপনি যদি ওয়েব সাইট ব্লগ এর মাধ্যমে মার্কেটিং করতে চান ,তাহলে কিছু খরচ হতে পারে।আপনি চাইলে এমন কিছু ওয়েব সাইট এর মাধ্যমে কাজটি করতে পারেন যেখানে খরচ কম।যেমন,ওয়ার্ডপ্রেস।
বর্তমানে একজন ক্রেতা যখন কোন কিছু ক্রয় করতে চায়,প্রথমে সে বিষয় গুলা অনলাইনে সার্চ করে দেখে ,পন্যর রিভিউ দেখে অন্য কোনো সাইটের পন্যর সাথে কম্পেয়ার করে দেখে। আপনি যদি ক্রেতাদের সাহায্য করেন কোনো প্রোডাক্ট এর রিভিউ দিয়ে, কোন মাধ্যমে গিয়ে তারা ভাল পন্য পাবে ।তাহলে তারা অবশ্যই আপনার ওয়েব সাইট বা ইউটিউবের লিংকে যাবে প্রোডাক্ট কিনবে এবং আপনি কমিশন পাবেন।
জনপ্রিয় প্যাসিভ ইনকাম মাধ্যম
আজকাল প্রায়ই একটা কমন শব্দ প্যাসিভ ইনকাম। প্যাসিভ ইনকাম এখন জনপ্রিয় আর্নিং মাধ্যম হলো প্যাসিভ ইনকাম বা আর্নিং ।প্যাসিভ ইনকাম করার জন্য অন্যতম একটি উপায় হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।যেমন, ধরুন অন্যান্য জব সেক্টরে একটা কাজের জন্য আপনাকে প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে হয়,কিন্তু এর জন্য আপনাকে এত সময় অপচয় করতে হবে নাহ। আপনার কোথাও ইনভেস্ট করা বা কোনো ব্লগ আপলোড করা আছে ,এটা থেকে আপনার একটা টাকা আসতে থাকবে। এটাই হলো প্যাসিভ ইনকাম।
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য সেরা উপায়
মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি যদি সফল হতে চান এর সহজ উপায় হলো বৃহৎ অডিয়েন্স এর ট্রাফিক সোর্স। আপনার প্রোডাক্ট বা সেবা যত বেশি মানুষের কাছে পৌছাবে আপনার সেল ততটা বাড়বে।চলুন জেনে নেওয়া যাক, এফিলিয়েট করার জন্য বেশ কিছু জনপ্রিয় মাধ্যমঃ
১. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং: একবিংশ শতাব্দীর সবথেকে জনপ্রিয় ও প্রচলিত মার্কেট প্লেস হলো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং।আমাদের প্রথম পছন্দের তালিকায় ফেসবুক।এর মাধ্যমে বেশি ট্রাফিক পাওয়া সম্ভব।বর্তমানে ফেসবুকে এর ২.৮ বিলিয়ন মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে ,যা এটিকে বিশ্বের ২য় বৃহত্তম সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম করে তুলছে । ২০২৩ সালে ফেসবুকের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নেট কালেকশন $815 বিলিয়ন। বিশেষ করে ফেসবুকে আমরা এখন বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্টের রিভিউ ,প্রমোশন ,এডভার্টাইজ ও এফিলিয়েট লিংক পেয়ে থাকি। ইন্সটাগ্রাম,টুইটার ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমে পন্যর প্রমোশন করা যাবে । খুব সহজেই এখান থেকে আয় করার সুজোগ রয়েছে।
২.ওয়েবসাইট অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংঃ বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হলো গুগল ।বিশ্বব্যাপী গুগলের ইউজার সংখ্যা রয়েছে 4.3 বিলিয়ন। প্রতি সেকেন্ডে 99,000টির বেশি সার্চ করছে, যা প্রতি দিনে প্রায় 8.5 বিলিয়নের বেশি ব্যবহার হচ্ছে।তাহলে বোঝাই যাচ্ছে এখানে আপনি হিউজ পরিমানে অডিয়েন্স পাচ্ছেন।
আপনি চাইলে নিজের ফ্রি বা পেইড ডোমেইন হোস্টিং নিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করে অডিয়েন্সের কাছে প্রোডাক্ট প্রমোশন করতে পারবেন। তবে আপনার সাইটে ট্রাফিক থাকতে হবে।আপনি যে নিশ(niche )নিয়ে কাজ করবেন,তা সম্পর্কে আর্টকেল লিখতে হবে। অডিয়েন্সের চাহিদা সম্পর্কে জেনে আপনাকে কাজ করতে হবে ।প্রোডাক্টের ভাল খারাপ তুলে ধরতে হবে লেখার মাধ্যমে এবং এর মাধ্যমেই আপনাকে অডিয়েন্সের কাছে প্রোডাক্ট ক্রয় করার জন্য এফিলিয়েট লিংক দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটের এসইও(সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন )স্ট্রং থাকতে হবে। আপনার কন্টেন্ট যতটা র্যাংক করবে আপনার ট্রাফিক বাড়বে এবং অডিয়েন্সের কাছে এফিলিয়েট লিংক পৌছাবে।
৩.ইউটিউব মার্কেটিংঃ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইউটিউব সক্রিয় ভিজিটর এর সংখ্যা মান্থলি ২.৭ বিলিয়ন ।তাহলে আসা করাই যাচ্ছে এখানে মার্কেটিং করা অনেক লাভজনক ও সহজ হবে।বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ভিডিও প্লাটফর্ম হলো ইউটিউব ।
এখানে আপনি আপনার নিজস্ব একটি চ্যানেল ওপেন করে।আপনার প্রোডাক্টের কোয়ালিটি সম্পন্ন ভিডিও পাবলিশ করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারবেন এবং প্রোডাক্ট সম্পর্কে মানুষকে জানাতে পারবে,তবে এর আগে হলো আপনাকে আপনার চ্যানেল এর জন্য ট্রাফিক নিয়ে আসতে হবে।আপনি আপনার চ্যানেল এর জন্য ব্লগিং ভিডিও করতে পারেন,মানুষকে নতুন নতুন তথ্য দিয়ে ভিজিটর বাড়াতে পারবেন।
৪.ই-মেইল মার্কেটিংঃ এফিলিয়েট বিপননের আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ই-মেইল মার্কেটিং।যেমন, ধরুন কোনো কোম্পানির ব্রান্ড ইমেজ ,লীড জেনারেশন ,কনজ্যুমারদের (ব্যবহারকারী)কাছে সরাসরি পন্যর লিংক পৌছানোর সহজ উপায় হলো ইমেইল মার্কেটিং ।তবে ইমেইল মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা আমাদের দেশে কম।ইউরোপের দেশ গুলোতে এর জনপ্রিয়তা বেশি।এখানে আপনার অডিয়েন্স টার্গেট রাখতে হবে ইউরোপ বেস মানুষদের।বিজনেসের শুরু থেকেই ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য আপনার টার্গেটেড ইউজারদের লীড কালেক্ট করে, নিয়মিত সেই সব ইউজারদের কাছে ই-মেইল মার্কেটিং করতে হবে।এর মাধ্যমে আপনি মানুষের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারছেন যা আপনার মার্কেটিং এর প্রয়োজন পড়বে।ই-মেইল এর মাধ্যমে আপনি আপনার ই-কমার্স বিজনেসের এফিলিয়েট লিংক দিয়ে দিতে পারছেন।
৫.এডভার্টাইজমেন্ট মার্কেটিংঃ সাধারানত কোনো উচ্চ মূল্যর প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন করা হয়ে থাকে।আপনি যদি অধিক মূল্যর পন্যর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চান ভিডিও তৈরি করুন বা যে কোম্পানির হয়ে কাজ করবেন তাদের নিজস্ব এডভার্টাইজ ব্যবহার করতে পারবেন।এই বিজ্ঞাপন আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেল,সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ ,গুগল এ পাবলিশ করতে পারবেন।বিজ্ঞাপন এর সাথে এফিলিয়েট লিংক সংযোগ করে দিয়ে প্রচার করতে পারবেন। এছাড়া গুগল এডসেন্স এখন আপনি আপনার এফিলিয়েট লিংক শেয়ার করতে পারছেন।এখানে সঠিক ভাবে কাজ করতে পারলে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করা ঘরে বসে।এটা বেসিকালি একটা ব্লগিং সাইট।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস থেকে কতো টাকা ইনকাম করা যায়?
Affiliate Marketing করে কত টাকা ইনকাম করা যায় এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় আনলিমিটেড ইনকাম করা যায় ।আপনি যত বেশি সময় দিবেন ,যতো বেশি কৌশলী হওয়া যায়,ভাল মার্কেটিং করে সেল বৃদ্ধির সাথে সাথে এফিলিয়েট করে আয় এর পরিমান বৃদ্ধি করা যাবে। কোনো প্রডাক্ট বিক্রির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হলো ক্রেতা। এফিলিয়েট থেকে ইনকাম করার প্রথমেই আপনার ভাল একটি অডিয়েন্স প্লাটফরম থাকতে হবে আর সাইটে প্রচুর পরিমানে ট্রাফিক বা ফলোয়ার থাকতে হবে।যেমন- ইউটিউব চ্যানেল,ফেসবুক পেজ ,ওয়েব পেজে ব্লগ আপলোড ইত্যাদি।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে কত টাকা ইনকাম করা যাবে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করছে ,আপনি গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী পন্যের সেবা দিতে পারছেন কিনা।প্রত্যেক প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য আপনাকে কতো টাকা কমিশন দিচ্ছে । অ্যাফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে আপনি কয়টি প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারছেন তার উপর। আপনি যে প্রোডাক্ট এর জন্য মার্কেটিং করছেন তার চাহিদা আছে কিনা মার্কেট প্লেসে ,এইগুলার উপর সাধারানত নির্ভর করে আপনি ঠিক কত টাকা ইনকাম করতে পারবেন।প্রথমে কঠিন লাগতে পারে যেহেত,এটা পুরাটাই অনলাইন ব্যবসা।অডিয়েন্স এর কাছে পন্যর চাহিদা ও বিশ্বস্ততার সহিত প্রোডাক্ট সেল করা ।
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ
অনলাইন জগতে কাজ করা মানে পুরা বিশ্বটাই আপনার মার্কেট। শুধু একান্ত ভাবে লেগে থাকা অনলাইন এফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। ২০১৭ সালে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মার্কেট প্লেসে আয় এর পরিমান ছিলো $ ৫.৫% বিলিয়ন মার্কিন ডলার,২০২৩ সালে এসে এটি হয়েছে প্রায়$ ১৭ বিলিয়ন এর বেশি।ধারনা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের এর মধ্য আশা করা যায় $36.9 বিলিয়ন গিয়ে দাঁড়াবে। তো আমরা আশা করতে পারি এফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস ২০৩০ এর মধ্য একটি নির্ভর যোগ্য পেশা।
বর্তমান সময়ে ঘরে ইনকাম করার জন্য affiliate marketing একটি লাভজনক পেশা ।এফিলিয়েট এর উপর পূর্ন দক্ষতা অর্জন করে আপনিও লক্ষাধিক টাকা ইনকাম করতে পারবেন।তবে এর জন্য আপনাকে জানতে হবে,সময় দিতে ।নিজেকে আপডেট রাখতে হবে ।এফিলিয়েট প্রোডাক্ট গুলা কিভাবে সিলেক্ট হয়,মার্কেটপ্লেসে এর লীড বা সেল কেমন করে বাড়ানো যায় এই সম্পর্কে আপনাকে খুটিনাটি বিষয়ে জানতে হবে।লেগে থাকুন সফলতা আসবে ।
আসন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ইউ ওয়াই ল্যাবের সকল অনলাইন কোর্সে পাবেন ১০০% স্কলারশিপ! আসন নিশ্চিত করতে রেজিঃ করুন এখনই।